ঈদকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের পাতিলাপুর ও সংলগ্ন আরো ১১টি গ্রামে এখন টুপি তৈরির ধুম পড়ে গেছে। টুপি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার সব বয়সের নারীরা। ঈদ উপলক্ষে ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেড়ে গেছে টুপির কদর। ঈদের বাড়তি চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয়ের তাগিদে তারা কাজ করছেন দিনরাত।
তৈরি করা টুপি রফতানী হয় ওমান, কুয়েত, সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে। বছরে গড়ে ৬০ হাজার টুপি তৈরি হয় এখানে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিটি টুপির মুল্য গড়ে ১ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকার টুপি তৈরি হয় এসব গ্রামে। উলিপুর উপজেলার সদর থেকে ৬ কি.মি. দুরে অবস্থিত পাতিলাপুর গ্রাম। এই গ্রামে এখন চলছে টুপি তৈরির উৎসব। কারও হাতে সাদা আর কারো হাতে রঙ বে-রঙয়ের কাপড়। সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফুটে উঠছে নান্দনিকতা। বিশেষ কায়দায় সেলাই করা কাপড় বা রেশমার উপর নক্শা তৈরি করে টুপি তৈরির করছে এলাকার বিভিন্ন বয়েসী নারীরা। পাশাপাশি ১২টি গ্রাম। পশ্চিম নাওডাঙা, মিয়াপাড়া, নাগরাকুড়া, থেতরাই, কুকুয়াপাড়া, চরুয়াপাড়া, দলদলিয়া, জকিয়াপাড়া, পান্ডুল, গুনাইগাছ, বাঙালি ও পাতিলাপুর গ্রাম এখন টুপির গ্রাম নামে পরিচিত। এসব গ্রামের গৃহবধূ, কলেজ-স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী-এমনকি অশিক্ষিত,স্বল্প শিক্ষিত বেকার কিশোরী-তরুণীরা এখন দারুণ ব্যস্ত টুপি তৈরির কাজে। সারাবছরই টুপি তৈরির কাজ করলেও ঈদের কারণে তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই।
বিশেষ কায়দায় সেলাই করা কাপড় বা রেশমার উপর নক্শা তৈরি করে টুপি তৈরির করছে এলাকার বিভিন্ন বয়েসী নারীরা। ঈদের খরচ বেশি, তাই কাজ করছেন বেশি বেশি। পাতিলাপুরের গৃহবধূ শারমীন জানান, তিনি ঈদে ৫টি টুপি জমা দিয়েছেন।
ঈদে খরচ বেশি। তাই দিন রাত পরিশ্রম করে বাড়তি উপার্জন করেছেন। পাতিলাপুর গ্রামের গৃহবধূ সালেহা, আমেনা ও হাসি বলেন, ‘মোর্শেদা আপা আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন। এখন শুধু স্বামীর উপার্জনের উপর নির্ভর করতে হয় না। স্বামীর সংসারে এখন অনেক সাহায্য করতে পারি। অবসরে টুপি তৈরির কাজ করি বলে নিজের সংসারের কোন কাজের ক্ষতি হয় না’। মোর্শেদা জানান, ফেনীর দু’জন ব্যবসায়ীর কাছে তিনি তৈরি করা টুপি বিক্রি করেন। আর এই টুপি মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি হয়। ওই ব্যবসায়ীরা আমার কাছে রেশমা (কারখানায় তৈরি নকশার ছাপ দেয়া টুপি তৈরির কাপড়) সরবরাহ করেন। এরপর তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের সঙ্গে নিয়ে স্রেফ সুঁই সুতা দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের নকশাখচিত টুপি। প্রতিটি টুপি তৈরির জন্য পারিশ্রমিক দেন ৩০০-৩৫০ টাকা। এতে সুঁই সুতার খরচ ৩০-৪০ টাকা। প্রতি টুপিতে কমিশন পান ৩০-৪০ টাকা। প্রতি গ্রামে সুপারভাইজার নিয়োগ করে কাজের তদারকির পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে ও রিকশায় গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে টুপি তৈরির কাজ দেখভাল করেন তিনি। এভাবে মাসে গড়ে প্রায় ৫ হাজার টুপি সরবরাহ করা সম্ভব হয়। তিনি টুপি তৈরির ব্যাপারে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে কয়েক বছর আগে ওমানে গিয়েছিলেন। পাতিলাপুরের দরিদ্র নারী মোর্শেদা টুপি তৈরি করে নিজে স্বাবলম্বী হবার পাশাপাশি দরিদ্র গ্রামীণ নারীদের আয়ের নতুন দরজা খুলে দিয়েছেন, সেই মোর্শেদাকে ঘিরে টুপি তৈরির এই কর্মযজ্ঞ চলছে। মোর্শেদা জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় এ বছর টুপির চাহিদা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তারপরেও ঈদ উপলক্ষে তিনি কয়েক দফায় কয়েক হাজার টুপি পাঠাচ্ছেন রপ্তানির জন্য।