রাজধানীর উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের বৌদ্ধমন্দিরের পাশের খাল থেকে রোববার আরও ৩২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া ডুবুরি মো. ইউসুফ এ তথ্য জানিয়েছেন।এর আগে শনিবার তুরাগ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে।পুলিশ বলছে, মাত্র কয়েক দিন আগে শেষ হওয়া পুলিশের বিশেষ অভিযানের কারণে সন্ত্রাসীরা ভয়ে এগুলো ফেলে রেখে গেছে। এই অস্ত্রগুলো আনার পেছনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্রান্ত থাকতে পারে বলেও মনে করছে তারা। শনিবার পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলির মধ্যে রয়েছে ৯৫টি ৭.৬২ বোরের পিস্তল, দুটি নাইন এমএম পিস্তল, ১০৬০টি গুলি (এর মধ্যে ৭.৬২ বোরের গুলি ২২০টি ও নাইন এমএম পিস্তলের গুলি ৮৪০টি), ৪৬২টি ম্যাগাজিন (৭.৬২ বোরের ১৮৯টি, এসএমজির ২৬৩টি ও গ্লোক পিস্তলের ১০টি), ১০টি বেয়নেট ও গুলি বানানোর ছাঁচ ১০৪টি। সাতটি ট্রাভেল ব্যাগের মধ্যে এগুলো ছিল।
ঢাকার উত্তরায় দিয়াবাড়ী খালে দ্বিতীয় দিনের অভিযানে আরও একটি কার্টনভর্তি বন্দুকের ম্যাগাজিন পাওয়ার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।আগের দিন ওই খাল থেকেই বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার মাহমুদুল হক বলেন, রোববার সকাল সোয়া ১১টার দিকে ওই কর্টন খুঁজে পান তাদের একজন ডুবুরি।ডুবুরি ইউসুফ ৩২টি ম্যাগাজিন ভর্তি একটি কার্টন উদ্ধার করেছেন। ঘটনাস্থলে এখনও ছয়জন ডুবুরি তল্লাশি কাজে নিয়োজিত আছেন।জঙ্গি দমনে সাত দিনের সাঁড়াশি অভিযান শেষ হওয়ার পরদিন একটি গাড়ি দেখে এক কনস্টেবলের সন্দেহ হওয়ায় অনেকটা আকস্মিকভাবে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলির সন্ধান পায় পুলিশ।
উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ী খাল থেকে শনিবার উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে ৯৭টি পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন, এক হাজার ৬০টি গুলি ও ১০টি বেয়নেট রয়েছে। এছাড়া পাওয়া গেছে ১০৪টি গুলি তৈরির ছাচ।ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, পিস্তলগুলোর মধ্যে ৯৫টিই বিদেশি; বেশিরভাগই সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোরের। যেসব ম্যাগাজিন শনিবার পাওয়া গেছে তার মধ্যে ২৬৩টি এসএমজির। আর গুলির মধ্যে ২২০টি সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোর পিস্তলের এবং ৮৪০টি নাইন এমএম পিস্তলের।
মাসুদুর রহমান জানান, সম্প্রতি তুরাগ থানা থেকে দক্ষিণখান থানায় বদলি হওয়া এক কনস্টেবল শনিবার দুপুরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ওই খালপাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় সন্তানকে প্র¯্রাব করানোর জন্য পাশে নিয়ে গিয়ে নম্বরপ্লেটবিহীন একটি কালো পাজেরো গাড়ি এবং তার পাশে চার-পাঁচজন লোককে দেখেন। তাদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তুরাগ থানায় ফোন করেন তিনি।পরে তুরাগ থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতটি ট্রাভেল ব্যাগে এসব অস্ত্র ও গুলি পায়।তুরাগ থানার ওসি মাহবুব হোসেন বলেন, গাড়ি থেকে কোনো মৃতদেহ খালে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে ওই কনস্টেবল সন্দেহ করেছিলেন। ফোন পেয়ে দ্রুত সেখানে পুলিশ গেলেও তার আগেই ওই গাড়ি সেখান থেকে চলে যায়।পরে খাল পাড়ে অল্প পানি রয়েছে এমন জায়গায় অস্ত্র-গুলি ভর্তি ব্যাগগুলো পাওয়া যায়। খালের পানিতে আরও অস্ত্র আছে কি না তা দেখতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা তল্লাশি শুরু করেন। রোববারও সেই তল্লাশি চলছে।ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলছেন, যারা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে জড়িত’ তারাই অস্ত্রগুলো সেখানে রেখেছে বলে তার ধারণা। শনিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখা নিরাপদ নয় ভেবে তারা নিরিবিলি স্থানে সেগুলো ফেলে রেখে যায়।তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে।