আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার শীর্ষ নেতা শরিফুল

ব্লগার ও প্রকাশক হত্যা মামলার আসামী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার শীর্ষ নেতা শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত, প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টায় গ্রেফতারকৃত আসামী শিহাবের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্য ও অন্যান্য গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে রামপুরা-বনশ্রী জে ব্লক এলাকায় এবিটির সদস্যদের আস্তানা রয়েছে মর্মে ব্যাপক সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। গতকাল ১৯ জুন রাত ০২.৩০ টায় অভিযান পরিচালনার এক পর্যায়ে উক্ত এলাকা থেকে মেরাদিয়া টু ডেমরা সড়কের দিকে সন্দেহভাজন তিন জন আরোহীসহ একটি মোটরসাইকেলকে বেরিয়ে যেতে দেখে ডিবি পুলিশ থামার নির্দেশ প্রদান করে। তারা পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে দ্রুতবেগে পালাতে থাকলে গোয়েন্দা পুলিশ গতিরোধ করার চেষ্টা করলে তারা মোটরসাইকেল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করলে ঘটনাস্থলে এক মটরসাইকেল আরোহী গুলিবিদ্ধ হয় এবং বাকি দুইজন পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি মোটর সাইকেল ও ২ রাউন্ড গুলি ভর্তি ১ বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

বিগত কয়েক বছরে সংগঠিত ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে আসছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। উক্ত তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১৯-০২-২০১৬ খ্রিঃ বাড্ডার সাতারকুল ও মোহাম্মদপুরে এবিটির দুটি আস্তানায় গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে বাড্ডা সাতারকুল এবিটির সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মোহাম্মাদপুর বোমা তৈরীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। উক্ত অভিযানে সেখান থেকে এবিটির দুই জন সদস্য গ্রেফতার হয় এবং একজন পুলিশ সদস্য মারাত্মক ভাবে আহত হয়। তাদের দেয়া তথ্য ও সেখান থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথিপত্রের ভিত্তিতে অত্র সংগঠনের আরও দুটি আস্তানার সন্ধান ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখাঁনে পাওয়া যায়। এর মধ্যে দক্ষিণখাঁনে বোমা তৈরীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ল্যাবরেটরি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। মোহাম্মদপুর ও দক্ষিণখানে এবিটির আস্তানা থেকে বিপুল পরিমানে বিস্ফোরক ও বিস্ফোরক তৈরীর উপাদান উদ্ধার করা হয়। উক্ত সকল অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য, চলমান মামলা সমুহের তদন্তে পরবর্তীতে আরোও ০৭ জন এবিটির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়, এবং গত ১৫-০৬-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী সুমন @ সিহাব @ সাকিব @ সাইফুলকে গ্রফতার করা হয়।

প্রকাশক টুটুল হত্যা চেষ্টায় গ্রেফতারকৃত আসামী সুমন @ শিহাব @ শাকিব @ সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে শরিফ @ হাদি -১ সহ এবিটির কয়েকজন সদস্যের সম্ভাব্য আস্তানা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী উক্ত এলাকা সমুহে পুলিশের ব্যাপক নজরদারী রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৯-০৬-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে রাত্র ০২.৩০ সময়ে রামপুরা-বনশ্রী জে ব্লক এলাকায় গোয়েন্দা বিভাগ ও থানা পুলিশের ব্যাপক তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচলানার এক পর্যায়ে উক্ত এলাকা থেকে তিন জন আরোহীসহ সন্দেহভাজন এক টি মোটরসাইকেলকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। তাদেরকে থামতে নির্দেশ দেওয়া হলে তারা দ্রুততার সাথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল তাদেরকে ধাওয়া করলে মোটরসাইকেল থেকে পুলিশের প্রতি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি করলে ঘটনাস্থলে এক মটরসাইকেল আরোহী গুলিবিদ্ধ হয় এবং অন্য দুই জন পালিয়ে যায়। উক্ত সন্ত্রাসীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। গুলিবিদ্ধ আসামীর চেহারা সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ গত ১৯-৫-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে প্রকাশিত ০৬ শীর্ষ এবিটি নেতার ছবির সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হয় যে, সে পুরুস্কার ঘোষিত এবিটির র্শীষ নেতা শরিফুল@ শরিফ @ হাদী-১ @ সাকিব @ আরিফ @ সালেহ। সঠিক নাম-ঠিকানা পরিচয় প্রাপ্তিসহ তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সর্ব-সাধারণের সহযোগীয়তা কামনা করে ০৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা পুরুস্কার ঘোষণা করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। প্রাথমিকভাবে শরিফ @ হাদী-১ এর সঠিক নাম পরিচয় জানা যায়নি।

এবিটির এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সংগঠক তাদের সংগঠনে শরিফুল @ সাকিব @ শরিফ @ সালেহ @ আরিফ @ হাদী-১ নামে পরিচিত। তার বাড়ী বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বলে জানা যায়। সে সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে থাকতো। এছাড়াও বিভিন্ন অপারেশনের সদস্য নির্বাচন ও সংগ্রহে প্রধান ভূমিকা পালন করতো। গত ২৬-০২-২০১৫ খ্রিঃ তারিখে টিএসসিতে অভিজিৎ রায় হত্যা, ০৭-০৮-২০১৫ খ্রিঃ তারিখে গোড়ানে নীলাদ্রী নীলয় হত্যা, ৩১-১০-২০১৫ খ্রিঃ তারিখে লালমাটিয়ায় আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা এবং ০৪-০১-২০১৫ খ্রিঃ তারিখে সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যা মামলার তদন্তে এবং বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতাকৃত এবিটির সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমান অনুযায়ী উক্ত সকল ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতি এবং সার্বিক নেতৃত্ব প্রদাণের সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এছাড়াও শরিফুল @ হাদী-১ গত ৩১-১০-২০১৫ খ্রিঃ তারিখ জাগৃতি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, ৩০-০৪-২০১৫ খ্রিঃ তারিখ তেজগাঁও এ ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা, এবং সাম্প্রতিক সময়ে গত ০৮-০৪-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে সূত্রাপুরে সংগঠিত ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং ২৫-০৪-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম প্রশিক্ষক ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে তদন্তে জানা যায়। অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বই মেলায় তার নেতৃত্বে অভিজিৎ রায়কে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। হত্যাকান্ডের ০২ মিনিট পূর্বেও তার নেতৃত্বে কয়েকজনকে অভিজিৎ রায়ের পিছু নিতে দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, ওয়াশিকুর বাবু হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক শরিফুল @ সাকিব @ শরিফ @ সালেহ @ আরিফ @ হাদী-১কে অভিযুক্ত করে তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল থানার অভিযোগপত্র নং ২২১ তাং ০১/০৯/২০১৫ ধারা ৩০২/৩৪ পিসি দাখিল করা হয়। এছাড়াও সে বাড্ডার সাতারকুলে পুলিশের উপর হামলায় অন্যতম নেতৃত্ব প্রদানকারী এবং মোহাম্মদপুর ও দক্ষিণখাঁনে বোমা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অন্যতম প্রশিক্ষক। গত ১৯-০৫-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে তার সমন্ধে তথ্য দাতাকে ৫,০০,০০০/ (পাঁচ লক্ষ) টাকা পুরুস্কার ঘোষণা করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।