সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)নবম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে ভৌতিক নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়।এই নির্বাচনকে ভৌতিক নির্বাচন বলার কারণ হিসেবে বেসরকারি সংস্থাটি বলেছে,এই নির্বাচনে প্রকৃত ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। অনেক জায়গায় মৃত ভোটাররাও ভোট দিয়েছেন, অর্থাৎ তাঁরা ভূত হয়ে ভোট দিয়েছেন। এ ছাড়া সন্ত্রাস-কারচুপি কত ধরনের হতে পারে, তা এই নির্বাচনে দেখা গেছে। এসব কারণ বিবেচনায় এটি একটি ভৌতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সুজন বলছে,পাকিস্তান আমলে নির্বাচনে পর আইয়ুব খান সেটিকে মৌলিক গণতন্ত্র বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর এই সরকার যে নির্বাচন দিচ্ছে, তা দেশবাসীকে ভৌতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচন উপহার দিচ্ছে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, এই নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ছে। এই ভাঙন রোধ করতে হলে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন। সরকার, নাগরিক সমাজ ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এই জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে হবে।ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, এই নির্বাচনে ১৪৫ জন নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার মানুষ।সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান।চলতি বছরের ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ৬ ধাপে সম্পন্ন এবারের ই্উনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় ১৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রাণহানির ক্ষেত্রে এ নির্বাচন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, প্রাণহানির ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি হলো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পযর্ন্ত নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষ ও নির্বাচনকেন্দ্রীক বিরোধের জের ধরে ১৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তার মধ্যে নির্বাচনপূর্ব সংঘর্ষে ৫৬, নির্বাচনকালীন সংঘর্ষে ৫৭ এবং নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, দলগত পরিচয়ের দিক থেকে নির্বাচনী সংঘাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী, সমর্থক ৫২ জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ১৭ জন, বিএনপির ৩ জন, বিএনপি বিদ্রোহী ১ জন, জাতীয় পার্টির জেপি’র ১ জন, জনসংহতি সমিতির ১ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ৪ জন, মেম্বার প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ৩২ জন, পুলিশ কনস্টেবল ১ জন এবং গ্রামপুলিশ ১ জন। এছাড়া ৩২ জনের ক্ষেত্রে কোনো দল বা প্রার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে একজন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী, একজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যানপ্রার্থী এবং ৪ জন মেম্বার প্রার্থীসহ ৬ নারী ও ৬ জন শিশু রয়েছে।

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, চেয়ারম্যান পদে শতকরা ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ইউনিয়নে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা থাকলেও দলটি প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারে কাছেও ছিল না। বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। আর স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের বেশিরভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। সেই দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শতকরা ৮৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ ইউনিয়ন কোনো না কোনভাবে আওয়ামী লীগের দখলে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এবারের ইউপি নির্বাচনকে ভৌতিক আখ্যা দিয়ে বলেন ‘এ নির্বাচনে মৃতরা ভোট দিয়েছেন, জীবিতরা নয়। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা রোধে সুজনের পক্ষ থেকে কিছু করণীয় তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল- স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ, ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সুস্থতা ফিরিয়ে আনা। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের জন্য একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে আরো ক্ষমতা, দায়িত্ব, সম্পদ দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রকৃত অর্থেই শক্তিশালী করা।সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্তিতি ছিলেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, জাতীয় কমিটির সদস্য মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রমুখ।