সারাদেশে চার দিনে গ্রেপ্তার সাড়ে ১১ হাজার

দেশব্যাপী পুলিশের চলমান জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানের চতুর্থ দিনে সারা দেশে ৩ হাজার ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৬ জনকে। সোমবার সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এ অভিযান চলে।পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান এ তথ্য জানিয়েছেন। এ নিয়ে গত চার দিনের সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার হলো ১১ হাজার ৬৮৪ জন, যার মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে রয়েছে ১৪৫ জন। গত শুক্রবার থেকে সারা দেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। অভিযানের পঞ্চম দিন চলছে।

শুক্রবার সকাল থেকে সকাল পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযানে ৮ হাজার ৫৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় ১১৯ জনকে।পুলিশের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রথম দিনে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৩৭ জনের মধ্যে ২৭ জন জেএমবি ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) সাতজন রয়েছে। বাকি তিনজনের পরিচয় সম্পর্কে জানায়নি পুলিশ সদর দপ্তর। ওই দিন গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১ হাজার ৮৬১ জন, নিয়মিত মামলার ৯১৭ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলার ১৯ জন ও মাদক উদ্ধার মামলার ৩৫৮ জন রয়েছে।দ্বিতীয় দিনে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গি ছাড়া অন্যদের মধ্যে ১ হাজার ৪৯৬ জন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। আর নিয়মিত মামলার আসামি ৫৮৮ জন।তৃতীয় দিনের অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ২ হাজার ৫৭৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ১৯ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ১৬০ জন ও অন্যান্য মামলায় ৪৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।চতুর্থ দিনের অভিযানে জঙ্গি ছাড়া পরোয়ানাভুক্ত ২ হাজার ৩৬৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ৩৮ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ২৯৫ জন ও অন্যান্য মামলায় ৩৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে সকাল পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযানে ৮ হাজার ৫৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় ১১৯ জনকে।পুলিশের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রথম দিনে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৩৭ জনের মধ্যে ২৭ জন জেএমবি ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) সাতজন রয়েছে। বাকি তিনজনের পরিচয় সম্পর্কে জানায়নি পুলিশ সদর দপ্তর। ওই দিন গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১ হাজার ৮৬১ জন, নিয়মিত মামলার ৯১৭ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলার ১৯ জন ও মাদক উদ্ধার মামলার ৩৫৮ জন রয়েছে।সাঁড়াশি অভিযানের চতুর্থ দিন সোমবার (১৩ জুন) সারাদেশে ২৬ জঙ্গিসহ সর্বমোট ৩ হাজার ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহছান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে আদালতের পরোয়ানাভুক্ত ২ হাজার ৩৬৮ জন, মাদক মামলার ২৯৫ জন, অস্ত্র মামলার ৩৮ জন ও অন্যান্য মামলার ৩৮৮ জন আসামি।

এর আগে গত তিন দিনে পুলিশ ১১৯ জঙ্গিসহ ৮ হাজার ৯১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। অভিযানের তৃতীয় দিন রোববার (১২ জুন) ৩৪ জঙ্গিসহ ৩ হাজার ২৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের অভিযানে সর্বমোট ৮৫ জন জঙ্গিসহ ৫ হাজার ৬৭১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।গত রোববার (৫ জুন) সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

দুই মাস আগে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়ে ঢাকায় আসার আগে চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন বাবুল আক্তার। সে সময় তার নেতৃত্বে জেএমবির আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে নেতা পর্যায়ের একজন পুলিশের সঙ্গে এক অভিযানে থাকা অবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন।ঘটনার দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, ‘বাবুল আক্তার একজন দক্ষ, সৎ অফিসার এবং জঙ্গি দমনে প্রচুর কাজ করেছে। তাই তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে।’চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুল মাঠে বিজিবির ৮৮ ব্যাচের সৈনিকদের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের ওই কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।মিতু হত্যার তিন দিন পরই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ধরতে বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দেয় পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দেশে অব্যাহত গুপ্তহত্যা ঠেকানোর উপায় হিসেবে এই কৌশল নিয়েছে পুলিশ। এই অভিযান চলবে টানা সাত দিন।যদিও এই অভিযানের নামে বিরোধী দমনের কৌশল এবং পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য, ঈদ বকশিশ আদায়ের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ বলছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে এমন অভিযানের প্রয়োজন রয়েছে।

নাটোর : পুলিশী অভিযানে নাটোর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তিন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীসহ ৬৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতরাতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় নিয়মিত মামলা ও ওয়ারেন্ট রয়েছে।নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী জানান, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বড়াইগ্রাম থানা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল হোসেন,নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের ছাত্র শিবিরের সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও শিবির কর্মী মাসুদ রানাসহ ৬৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে নিয়মিত মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী রয়েছে। এছাড়াও সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না নিয়ে সড়কে মোটরসাইকেল চলাচলকারীদের তল্লাশী করা হয়। এসময় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৩ টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

সাতক্ষীরা:জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে সাতক্ষীরায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের পঞ্চম দিনে এক জেএমবি সদস্য এবং জামায়াত-শিবিরের নয় জন কর্মীসহ মোট ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলার আটটি থানায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।একজন জেএমবি সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটক জেএমবি সদস্য কলারোয়া উপজেলা রাজপুর গ্রামের সোলাইমান সরদারের ছেলে হাসানুজ্জামান।

আটককৃতদের মধ্যে, সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ১৮ জন, কলারোয় থানা থেকে ৬ জন, তালা থানা ৩ জন, কালিগঞ্জ থানা ৪ জন, শ্যামনগর থানা ৫ জন, আশাশুনি থানা ৪ জন, দেবহাটা থানা ৪ জন এবং পাটকেলঘাটা থানা থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও (পরিদর্শক) এস,আই কুমকুম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে।

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ৪৫ জনকে আটক করেছে জেলা পুলিশ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) আসলাম খান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত বিভিন্ন মামলার আসামী ও নাশকতা করতে পারে এমন সন্দেহভাজনসহ ৪৫জনকে আটক করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জেলা পুলিশ পরিচালিত অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম দিন শুক্রবার ৬৮, দ্বিতীয় দিন শনিবার ৬৫, তৃতীয় তিন রোববার ৫২, চতুর্থ দিন সোমবার ৭০ জনকে আটক করা হয়।