কমিশনার মনিরুল ইসলাম

ইসরাইলের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠককারীদের এবং জঙ্গিদের উদ্দেশ্যের মিল রয়েছে জানিয়ে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে আটক দুই জঙ্গি শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকায় এসেছে।মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ কথা জানান। সোমবার রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে মুজাহিদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম নামে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, গ্রেফতার জঙ্গি সৈয়দ মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা এবং আরিফুল ইসলাম ওই জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য।তিনি দাবি করেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোর অর্থায়নে কয়েকটি বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম জানিয়েছে আটক এই দুই জঙ্গি সদস্য। তারা স্লিপার সেলের জন্যও অর্থ সংগ্রহ করছিলেন।মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে যেভাবে সরকার পতনের সড়যন্ত্র করেছিলেন, আনসারুল্লাহর এ দুই সদস্যও একই ধরনের পরিকল্পনা থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন।তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকারকে বিপাকে ফেলাই ছিল তাদের লক্ষ্য। মোসাদের সঙ্গে বৈঠককারীদের এবং জঙ্গি সংগঠনের উদ্দেশ্য একই।

এদিকে গ্রেফতার এই দুই ‘জঙ্গিকে’ আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে ডিবি।সাম্প্রতিক সময়ে গুপ্তহত্যা ও নাশকতায় জড়িতদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের ‘উদ্দেশ্যের’ মিল পাওয়ার কথা বলছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। কামরাঙ্গীর চর থেকে সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ কথা বলেন।তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব হত্যা ও হামলার ঘটনা ঘটছে তার পেছনে মূলত দুটো জঙ্গি দলের সম্পৃক্ততার তথ্য তারা পাচ্ছেন।এখন জেএমবি পরিচয়ে যারা কাজ করছে, তাদের আমরা নিউ জেএমবি বলি। নিউ জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম, যারা আগে আনসারউল্লাহ বাংলা টিম নামে ছিল, তারা একত্রে এই হত্যাকা-গুলো ঘটাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।আর এই জঙ্গিরা যে উদ্দেশ্যে এসব গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে, তার সঙ্গে কতিপয় রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য মিলে যায় বলে মত দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।সম্প্রতি আপনারা জানেন, আসলাম চৌধুরী নামের একজন ভদ্রলোক যিনি একটি দলের যুগ্ম মহাসচিব, তিনিও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্য এবং এদের উদ্দেশ্যে অনেক মিল রয়েছে। যেমন মোসাদের সঙ্গে মিটিং করে ইন্ডিয়াকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছিল যে মাইনরিটি কমিউনিটি অর্থাৎ হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে এবং এরা (জেএমবি-আনসারউল্লাহ) সরাসরি হত্যাকা-ে লিপ্ত।২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার ৪০টির বেশি ঘটনা ঘটেছে, যাতে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক, ব্লগার, প্রকাশক যেমন খুন হয়েছেন, তেমনি জঙ্গি কায়দায় হত্যার শিকার হয়েছেন বিদেশি নাগরিক, ভিন্ন মতাবলম্বী মুসলমান,ধর্মীয় সংখ্যালঘু পুরোহিত, পাদ্রি, ভিক্ষু এবং সমকামী অধিকারকর্মী। ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ১৫ মে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও করা হয়।আসলাম ও সাফাদি দুজনেই চক্রান্তের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সাফাদি বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতে এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের অবস্থা’ নিয়েই কথা হয় তাদের।বিএনপির পাশাপাশি তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর ‘উদ্দেশ্যও’ এসব জঙ্গিদের কাজের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিলে যায় বলে মনে করছেন মনিরুল।

এই দুইপক্ষের চাওয়ার ভেতরে অনেক মিল রয়েছে। আপনারা জানেন, যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচারকাজ চলছে তা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্বের কাছে সরকারকে নানাভাবে বিব্রত করতে চাইছে। কোনোভাবে সরকারকে চাপ তৈরি করে যদি বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা যায়, সেই চেষ্টা করছে। সেটার সঙ্গেও এটার একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, উত্তরবঙ্গে কয়েকটি হত্যার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।রাজশাহীর শিক্ষক হত্যায় কারও কারও নাম বেরিয়ে এসেছে, রাজশাহীর বাগমারার মসজিদে যে আত্মঘাতী হামলাকারী ছিল, তার পরিচিতিও প্রকাশিত হয়েছে।এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জঙ্গিদের উদ্দেশ্যের অনেক মিল পাওয়া যাচ্ছে, বলেন তিনি।মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান, গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান, শেখ নাজমুল আলম ও মাহবুব আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।