বিগত কয়েক দশক থেকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পানি প্রবাহ কমে গেছে। এসব নদীর পানি শিল্প কারখানা থেকে তরল বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং মানব বর্জ্যরে মাধ্যমে দূষিত হয়ে পড়ছে। এসব নদীতে শিল্পের বর্জ্য না ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।এছাড়াও বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পসহ ৩ হাজার ৩২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার সাত প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।নদীগুলোর পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এক সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদীর পানির নাব্যত্যা রক্ষা করতে হবে। এসব নদীতে শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলা যাবে না। প্রয়োজনে প্রতিটি শিল্প-কারখানায় ইটিপি বা বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। যাতে করে নদীগুলোকে রক্ষা করাসহ পরিষ্কার রাখা যায়।
সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পানি প্রবাহ কমে গেছে। এসব নদীর পানি শিল্প কারখানা থেকে তরল বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং মানব বর্জ্যরে মাধ্যমে দূষিত হয়ে পড়ছে। সুস্থ্য কোনো মানুষ এসব নদীর পাশে গিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারে না।বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে ১ হাজার ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ নদী পুনখনন করা হবে, যেন বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা মহানগরীর চারপাশে বহমান নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বজায় থাকে।২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৯৪৪ কোটি টাকা। একনেক সভায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু ৬ বছরে মাত্র ১৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে প্রকল্পটি। প্রকল্প এলাকায় ছোট বড় কালভার্ট ও সেতু আছে সেগুলোও ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যমুনা ও তুরাগ থেকে বুড়িগঙ্গায় পানি আনা হবে।মিলিটারি ফার্ম আধুনিকায়ন প্রকল্পটি ১১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যানজট নিরসন, সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ১ হাজার ২৬ কোটি টাকার প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
ডিএনসিসির বিভিন্ন সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় উত্তরে বিদ্যমান সড়কের উন্নয়ন এবং সংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করাসহ পথচারীদের হাঁটার সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে। ডিএসসিসিকে আরও আধুনিক শহরে পরিণত করা এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।হরিশপুর বাইপাস মোড় থেকে বনবেলঘরিয়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত নাটোর শহরের প্রধান সড়কের মিডিয়াসহ পেভমেন্ট প্রশস্থকরণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অব গজারিয়া ৩৫০ মেগাওয়াট কোল ফায়ার্ড থারমাল পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড রক্ষা (২য় পর্যায়) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। মোবাইল গেইম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ।এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছর ৩২টি একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অনুমোদন পাওয়া ২৫৮টি প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে অনুমোদন হয়েছিল এর অর্ধেক। তাই শুরু থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে।সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।