আহসান উল্লাহ মাস্টার

শ্রমিক নেতা সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় আপিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে আগামীকাল বুধবার (১৫ জুন)। চূড়ান্ত রায়ের মধ্য দিয়ে এক যুগ আগে ঘটে যাওয়া নির্মম এই হত্যাকা-ের বিচারের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।ঐতিহাসিক এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণা হয়েছে ২০০৫ সালে। এরপর মামলাটি জেল আপিল ও নিয়মিত আপিলের জন্য হাইকোর্টে চলে আসে।আওয়ামী লীগের তুখোর এ নেতার হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিলের উপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে।এর আগে গত ৮ জুন (বুধবার) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ শুনানি শেষে ১৫ জুন রায়ের দিন ধার্য করেন।চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ- নিশ্চিত করণ), আপিল ও ফৌজদারি বিবিধ আবেদনের উপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে তা শেষ হয় ৮ জুন (বুধবার)।

আপিলের এ রায়ে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ- প্রাপ্ত আসামিদের সাজা বহাল থাকবে বলে আশা করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা।এ মামলাটির বিচার সম্পন্ন করা হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে ২২ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় বহাল থাকবে বলে আশা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।এ মামলায় রায়ের আগের দিন বাদীপক্ষের আইনজীবী কাজী মো. সাজোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত যে রায় দিয়েছিলো সেটি বহাল থাকবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, উচ্চ আদালত মামলাটির আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনেছেন, সাক্ষীদের জেরা জবানবন্দি নিয়েছেন। আশা করছি বিচারিক আদালতের রায় বহাল থাকবে।মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা এ হত্যা মামলায় আসামিরা খালাস পাবেন বলে আশা করছি। উচ্চ আদালতে এ মামলার আপিলের শুনানি করেছি। আসামিদের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি আসামিরা এ মামলার অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবেন।খন্দকার মাহবুব হোসেন এ মামলায় ৮ জন আসামির পক্ষে আদালতে খালাস চেয়ে যুক্তি তুলে ধরেছেন।

এ মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ২২ আসামি হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, মোহাম্মদ আলী, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, সোহাগ ওরফে সরু, শহীদুল ইসলাম শিপু (পলাতক), হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু (পলাতক), আল আমিন (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় মিয়া (পলাতক), রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), জাহাঙ্গীর (পলাতক), রতন ওরফে ছোট রতন (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম (পলাতক), মশিউর রহমান ওরফে মনু (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া (পলাতক), নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক)।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৬ আসামি হলেন- রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর, নুরুল আমিন, মনির ও অহিদুল ইসলাম টিপু (পলাতক)। এ মামলায় খালাস পান কবির হোসেন ও আবু হায়দার ওরফে মিরপুরইয়া বাবু।সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ২ জন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন- ছোট রতন ও আল আমিন। পলাতক ৮ জন হলেন- নুরুল ইসলাম দিপু, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু, আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু, ফয়সাল, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির, মরকুনের জাহাঙ্গীর, মশিউর রহমান ওরফে মশু ও খোকন।এছাড়া যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত ৬ আসামির মধ্যে এক আসামি অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক আছেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওমর ফারুক রতন নামে আরেকজন তার সঙ্গে খুন হন। ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টঙ্গী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, তদন্ত শেষে এই মামলায় ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ জন এবং আসামিপক্ষে ২ জন সাক্ষ্য দেন।

২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল এই মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদ- এবং ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। খালাস পায় ২ আসামি।মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আসামি শহীদুল ইসলাম শিপু ও লোকমান হোসেন হাইকোর্টে পৃথক ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী আবেদন করেন। শুধু জেল আপিল করেন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি কানা হাফিজ।