তিন দিনে ১১৯ জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার প্রায় ৯ হাজারজঙ্গি দমনে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে তিন দিনে ১১৯ জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৯১৬ জনকে। তৃতীয় দিন রোববার (১২ জুন) ৩৪ জঙ্গিসহ ৩ হাজার ২৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের তৃতীয় দিনে সারা দেশে ৩ হাজার ২৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৪ জনকে। রোববার সকাল থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান এ তথ্য জানিয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন দিনের সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার হলো ৮ হাজার ৫৬৯ জন, যার মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১৯ জনকে।এর আগে গত শুক্রবার সকাল থেকে গত শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাঁড়াশি অভিযানে সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ১৯২ জনকে। তাদের মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৭ জন। এরপর শনিবার সকাল থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ১৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮ জনকে।

শুক্রবার থেকে সারা দেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। আজ অভিযানের চতুর্থ দিন চলছে।প্রথম দিনে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৩৭ জনের মধ্যে ২৭ জন জেএমবি ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) সাতজন রয়েছে। বাকি তিনজনের পরিচয় সম্পর্কে জানায়নি পুলিশ সদর দপ্তর। ওই দিন গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ১ হাজার ৮৬১ জন, নিয়মিত মামলার ৯১৭ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলার ১৯ জন ও মাদক উদ্ধার মামলার ৩৫৮ জন রয়েছে।

দ্বিতীয় দিনে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিবাদে অন্যদের মধ্যে ১ হাজার ৪৯৬ জন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। আর নিয়মিত মামলার আসামি ৫৮৮ জন।তৃতীয় দিনের অভিযানে পরোয়ানার ২ হাজার ৫৭৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ১৯ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ১৬০ জন ও অন্যান্য মামলায় ৪৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহসান এ তথ্য জানান।তিনি জানান, তৃতীয় দিন রোববার গ্রেপ্তারদের মধ্যে পরোয়ানাভুক্ত ২ হাজার ৫৭৮, অস্ত্র মামলায় ১৯, মাদক মামলায় ১৬০ এবং অনান্য মামলায় ৪৫৪ জন রয়েছে।৩৪ জঙ্গির মধ্যে ২৫ জন জেএমবি, ৩ জন হিজবুত তাহরীর, ৩ জন আনসার আল ইসলাম এবং ৩ জন আল্লার দল জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।

ঢাকা রেঞ্জের টাঙ্গাইল জেলায় ১ জন জেএমবি, ময়মনসিংহ রেঞ্জের শেরপুর জেলায় ১ জন জেএমবি, ১ জন আল্লাহর দল, জামালপুর জেলায় ৩ জন জেএমবি, ময়মনসিংহ জেলায় ১ জন জেএমবি, রাজশাহী রেঞ্জের রাজশাহী জেলায় ১ জন জেএমবি, নওগাঁ জেলায় ১ জন জেএমবি, পাবনা জেলায় ১ জন জেএমবি, বগুড়া জেলায় ৩ জন জেএমবি, খুলনা রেঞ্জের নড়াইল জেলায় ১ জন জেএমবি, সাতক্ষীরা জেলায় ১ জন জেএমবি, বাগেরহাট জেলায় ১ জন জেএমবি, ঝিনাইদহ জেলায় ২ জন আল্লাহর দল, যশোর জেলায় ২ জন জেএমবি, মেহেরপুর জেলায় ১ জন জেএমবি, রংপুর রেঞ্জের রংপুর জেলায় ১ জন জেএমবি, গাইবান্ধা জেলায় ১ জন জেএমবি, নীলফামারী জেলায় ১ জন জেএমবি, দিনাজপুর জেলায় ১ জন জেএমবি, ঠাকুগাঁও জেলায় ১ জন জেএমবি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের নোয়াখালী জেলায় ১ জন হিজবুত তাহরীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১ জন জেএমবি, সিলেট রেঞ্জের সিলেট জেলায় ১ জন হিজবুত তাহরীর, বরিশাল রেঞ্জের পিরোজপুর জেলায় ১ জন জেএমবি এবং ডিএমপি, ঢাকায় ১ জন হিজবুত তাহরীর, ৩ জন আনসার আল ইসলাম সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৭টি ম্যাগজিন, ৮টি চাপাতি, ৩৩ রাউন্ড গুলি, ২টি পেট্রোল বোমা, ৩১টি ককটেল এবং ২৮টি উগ্রপন্থি বইসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ১টি রিভলবার, ৬টি পিস্তল, ১টি বিদেশি বন্দুক ও ৫টি এলজি রয়েছে। এ ছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮৬টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে।

এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের অভিযানে সর্বমোট ৮৫ জন জঙ্গিসহ ৫ হাজার ৬৭১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।গত রোববার (৫ জুন) সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

দুই মাস আগে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়ে ঢাকায় আসার আগে চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন বাবুল আক্তার। সে সময় তার নেতৃত্বে জেএমবির আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে নেতা পর্যায়ের একজন পুলিশের সঙ্গে এক অভিযানে থাকা অবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন।ঘটনার দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, বাবুল আক্তার একজন দক্ষ, সৎ অফিসার এবং জঙ্গি দমনে প্রচুর কাজ করেছে। তাই তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুল মাঠে বিজিবির ৮৮ ব্যাচের সৈনিকদের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের ওই কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

মিতু হত্যার তিন দিন পরই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ধরতে বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দেয় পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশে অব্যাহত গুপ্তহত্যা ঠেকানোর উপায় হিসেবে এই কৌশল নিয়েছে পুলিশ। এই অভিযান চলবে টানা সাত দিন।

যদিও এই অভিযানের নামে বিরোধী দমনের কৌশল এবং পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য, ঈদ বকশিশ আদায়ের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ বলছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে এমন অভিযানের প্রয়োজন রয়েছে।সাতক্ষীরা : সারাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে সারা দেশে চলা সাঁড়াশি অভিযানের’ অংশ হিসেবে পুলিশ সাতক্ষীরা থেকে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার রাত আটটা থেকে আজ সোমবার ভোর পাঁচটার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার অফিসের উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর থানায় ১৫ জন, কলারোয়ায় ছয়জন, তালা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগরে পাঁচজন করে, আশাশুনিতে সাতজন, দেবহাটায় ছয়জন ও পাটকেলঘাটায় তিনজন রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানায় জামায়াতের পাঁচজন নেতা-কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে আসাদুজ্জামান জামায়াতের রোকন। তাঁর বাড়ি উপজেলার খানপুর গ্রামে। এ ছাড়া কলারোয়ায় একজন ও পাটকেলঘাটায় একজন জামায়াতের কর্মী রয়েছেন।এসআই কামাল জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ২৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে নিয়মিত মামলা ও ২৫ জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন জামায়াতের নেতা-কর্মী।