বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত বিএনপির দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এই দাবি করেন।রিজভী দাবি করেন, সরকার নিজেদের ‘অবৈধ সত্তা’ লুকানোর জন্য সারা দেশে ধরপাকড় শুরু করেছে। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো জঙ্গিকে চিহ্নিত করতে পারেনি। অথচ রমজান মাসে সারা দেশে অনেক সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করছে।রিজভী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের নামে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জঙ্গিদের আটক ও জঙ্গিবাদের আস্তানা ধ্বংস করার পরিবর্তে সরকার সাধারণ মানুষকে পুলিশি নির্যাতনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আসলে ধারাবাহিক হত্যাকা- বন্ধ করতে নয়, চলমান অভিযান গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের দমন করার অভিযান।

চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে রিজভী আরও বলেন, সারা দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ মূল জঙ্গিদের চিহ্নিত করতে পারেনি সরকার। মাত্র ৮৫ জনকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে এই পবিত্র রমজান মাসে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে কেন পুলিশি নির্যাতন করা হচ্ছে-এমন প্রশ্ন করেন তিনি।সরকার এখন কোনো আইনকেই পরোয়া করে না উল্লেখ করে রিজভী অভিযোগ বলেন, আদালতের দেওয়া নির্দেশনা অমান্য করে সরকার বিনা পরোয়ানায় মানুষকে গ্রেপ্তার করে ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

গত শুক্রবার থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামে পুলিশ। পরে অবশ্য পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযানকে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান উল্লেখ করা হয়। অভিযানের প্রথম তিন দিনে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে আটক করা হয়েছে ১১৯ জনকে।রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম অত্যাচারের জন্য এ অভিযান চালানো হয়েছে। জঙ্গি অভিযানের নামে দেশবাসীর ওপর চারানো হচ্ছে স্টিম রোলার।এ অভিযান ধারাবাহিক হত্যাকা- বন্ধ করার জন্য নয়, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানীর জন্যই গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য রুহুল কবির রিজভীর।জঙ্গিবাদ আড়াল করতে এ অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদীদের হত্যাকা- নিয়ে প্রায় সাত হাজারের অধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১শ’র অধিক বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে অসংখ্য নিরীহ ও সাধারণ মানুষকে। অথচ মূল জঙ্গিদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি। মাত্র ৮৫ জনকে সন্দেহভাজনকে জঙ্গি হিসেবে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রেরিত বার্তায় বলা হয়েছে।

এক প্রশ্নে জাবাবে রিজভী বলেন, চাপে রাখতে শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবদের বাড়ির সামনে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ কিসের আলামত। বিএনপি নেতাকমীরা স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরাও করতে পারছে না।বিএনপির এ নেতা বলেন, অভিযানের নামে গণগ্রেফতার এবং বন্দুক যুদ্ধের নামে প্রাণহানীর ঘটনা ঈদের আগে দেশের মানুষকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ভীতি আর আতঙ্কের রাজ্যে। চাদাবজিও চলছে হরদম।

বিগত আন্দোলনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘যেখানেই পেট্রোল বোমা ও আগুন সেখানেই আওয়ামীরা। তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিই হচ্ছে সন্ত্রাস ও শক্তি প্রয়োগ করা। পাশাপাশি অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটতে আওয়ামী লীগের জুড়ি মেলা ভার।সরকার পুলিশকে ব্যাবহার করে গায়ের জোরে যে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করেছে। এ ধরনের মামলা হাস্যকর এবং জনগণ তা বিশ্বাস করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল. সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মাহবুবুল হক নান্নু, সহ দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।