গোপালগঞ্জে দেশবন্ধুর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চরমে

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ভাঙ্গারহাট এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে প্রতারক দেশবন্ধু বিশ্বাস। নিজেকে কখনও মানবাধিকার কর্মী, কখনও সাংবাদিক, কখনও গোয়েন্দা পুলিশ, কখনও রাজনৈতিক নেতা বা কখনও বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয়দানকারী এই দেশবন্ধুর অত্যাচারে ও অনাচারে এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ভাঙ্গারহাট এলাকার সাধারণ নিরীহ জনগণ। আতংকে কাটছে তাদের দিনরাত। দেশবন্ধু’র কার্যকলাপের তীব্র প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের প্রাক্তণ মেম্বার প্রিয়লাল মৃধা (৬৪), নেতৃস্থানীয় দীনবন্ধু বাড়ৈ (৬০), রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (৭০), মৃত্যুঞ্জয় ওঝা (অবসরপ্রাপ্ত), নিবাস হালদার (৪৫), সত্যবান মৃধা (৪২), অমল ওঝা (৪৮), গিরী হালদার (৩৫) সহ ভাঙ্গারহাট এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ অভিযোগ করে বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই দেশবন্ধু। প্রতারণার দায়ে পুলিশও তাকে একাধিকবার গ্রেফতারও করেছে। দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে বা তার কথা না শুনলে পিছনে অসৎ লোক লেলিয়ে দিয়ে, গোলমাল, ফ্যাঁসাদ, মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলা ইত্যাদি বিভিন্ন কায়দায় সে এলাকার মানুষকে হয়রানী ও নির্যাতণ চালিয়ে আসছেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি যে কোন হীন কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। সম্প্রতি ওই এলাকার দীর্ঘদিনের পুরোনো ঐতিহ্য ঘোড়দৌড় ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ দিন পর দ্বিতীয় দফায় একই মেলা করার জন্য তিনি নিজ নামে পোস্টার বানিয়ে এলাকায় ছাপিয়ে দেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়। মেলা করতে না পেরে তিনি, তার ভাইপো প্রণব বিশ্বাস ও মিঠুন বিশ্বাস এবং তার ছেলে দিলীপ বিশ্বাস ও মানিক বিশ্বাসসহ তার সন্ত্রাসী দল নিরুপম বিশ্বাস নামে এক ছেলেকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধর করে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিরুপমের বাবা অনন্ত বিশ্বাস বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা দায়ের করে। এর প্রেক্ষিতে দেশবন্ধুও তার ভাইপো প্রণব বিশ্বাসের মাথায় ব্লেড দিয়ে কেটে একদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে টাকার বিনিময়ে ২৬ এর সার্টিফিকেট বের করে আদালতে পাল্টা মিথ্যা মামলা দায়ের করে। তার হুমকি-ধমকিতে অসহায় স্থানীয় পরেশ বিশ্বাস, নকুল বিশ্বাস, সঞ্জয় জয়ধর ও মিহির বিশ্বাস দেশবন্ধু’র বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এলাকার লোকজন আরও অভিযোগ করেন, দেশবন্ধু তার সন্ত্রাসী বাহিনী সঙ্গে নিয়ে ফিল্মী কায়দায় রাত-বিরাতে এলাকায় মহাড়া দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেন না। দেশবন্ধু-আতংকে তাদের রাত কাটছে।

এ ব্যাপারে দেশবন্ধু বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে তিনি কথা বলতে চাননি। এরপর কয়েক দফায় ফোন করার পর তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে অভিযোগকারীদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, ওরা আমার বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা করেছে। আপনারাও যা পারেন করেন।

তবে এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের প্রাক্তণ চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতারক দেশবন্ধু বিশ্বাস ওই এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টায় রয়েছেন। এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। তার ভয়ে মানুষ এখন আতংকে সময় পার করছেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচণী এলাকা এই কোটালীপাড়ায় প্রতারক দেশবন্ধুর এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করে তাকে উপযুক্ত শাস্তি না দেয়া গেলে এলাকার পরিবেশ ক্রমান্বয়েই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।