জঙ্গি দমনের নামে সারা দেশে গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অভিযানের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পুলিশনির্ভর সরকার ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বকশিশ হিসেবে গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের সুযোগ করে দিচ্ছে।শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদ সম্মেলনে রিজভী এই অভিযোগ করেন।জঙ্গি দমনে শুক্রবার থেকে এক সপ্তাহের সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রিজভী বলেন,জঙ্গি দমনের নামে দেশব্যাপী যে গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্য চলছে, তাতে পুরো ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রহস্যজনক বলে জনগণ মনে করে। জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এর অন্তরালে সরকারের বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।রিজভী অভিযোগ করেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযান বলা হলেও সারা দেশ থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছোট, বড়, মধ্যম প্রকৃতির কোনো জঙ্গিকে আটক করেছে বলে পুলিশ জানাতে পারেনি। এই অভিযানে মাদকসেবীদের মতো কিছু সামাজিক অপরাধীরা থাকলেও ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে ৫৪ ধারা-বিষয়ক যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটিকেও উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এই অভিযানে সাধারণ মানুষ ও বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
রিজভী দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃত জঙ্গিবাদ দমন করতে চান না। বিরোধী দল দমনই তাঁদের আসল উদ্দেশ্য। রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট হিসেবে সব তথ্য পেয়ে থাকেন। তা-ই যদি হয়, তাহলে ওনার প্রেস কনফারেন্সের এক দিন পরেই পাবনায় আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কী করে কুপিয়ে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা?রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে একের পর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একজন আসামিকেও ধরতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে বিনা বিচারে তদন্ত ছাড়াই মানুষকে গ্রেপ্তার করে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে। তারা জঙ্গি হয়ে থাকলে তাদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মূল হোতাদের খুঁজে বের না করে কথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা রহস্যজনক।সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গুপ্তহত্যা ঠেকাতে যৌথ অভিযান শুরুর পর সারাদেশে ১২’শর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযোগ উঠেছে জঙ্গি দমনে অভিযান বলা হলেও বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।এই গণগ্রেপ্তারে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে দাবি করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ও বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে।
পুলিশ নির্ভর অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বখশিস হিসেবে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে জনগণ মনে করে, বলেন রিজভী। দেশে একের পর এক জঙ্গি কায়দায় হত্যা-হামলার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এই অভিযানের ঘোষণা দেওয়া হয়। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে পুলিশ শিরোনামে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী এই অভিযান শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হয়ে চলবে সাত দিন। অভিযানের প্রথম দিন সারাদেশে সহ¯্রাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৭ জন ‘জঙ্গি’ রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।রিজভী বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব খবর পাচ্ছি, গণগ্রেপ্তারের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় ঢুকছে, তল্লাশি করছে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই।সম্প্রতি উচ্চ আদালতে ৫৪ ধারা বিষয়ক যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটিকে পুলিশ উপেক্ষা করছে। আমরা মনে করি এটি আদালতের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ধৃষ্টতার শামিল।
পাবনায় আশ্রমের সেবায়েত নিত্য রঞ্জন পান্ডে হত্যার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট হিসেবে সকল তথ্য পেয়ে থাকেন। তাই যদি হয়, তাহলে উনার সংবাদ সম্মেলনের একদিন পরেই নিত্য রঞ্জন পান্ডেকে কী করে কুপিয়ে হত্যা করলে দুর্বৃত্তরা?আসলে প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত জঙ্গিবাদ দমন করতে চান না। মূলত বিরোধীদল দমনই তাদের উদ্দেশ্য। গতকাল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করীম সেলিম বলেছেন, শিগগিরই টার্গেট কিলিং বন্ধ হবে। এজন্য জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এসব হত্যাকা-ের ঘটনায় তারাই জড়িত কিনা?বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারাদেশে গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, সকল দিক থেকে ব্যর্থ এই সরকার, কুপথগামী সরকার। উনার (শেখ হাসিনা) কুপথ ও কুকথা ছাড়া তো আর কিছু নাই। আজ ৭/৮ বছর উনি ক্ষমতায় আছেন। এই সময়ের মধ্যে জঙ্গিদের এতো ঘটনা এভাবে কেন এতো ডালপালা বিস্তার করল? এটা সকল দিক থেকে ব্যর্থ সরকারের পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই না।
সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মাহবুবুল হক নান্নু, শহীদুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।