Gazipur-(1)- 09 June 2016-Court (Death Sentence)-2

গাজীপুরে মুক্তিপণের দাবীতে এক স্কুল ছাত্রকে অপহরণ ও হত্যার দায়ে তিন যুবককে ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে বিভিন্ন ধারায় কারাদন্ড ও জরিমানা করা হয়। ঘটনার প্রায় ২০ বছর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ ফজলে এলাহী ভ’ইয়া এ রায় প্রদান করেন।

দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালদৈ গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে আতাউর রহমান ওরফে আতা, একই গ্রামের হাশিম উদ্দিনের ছেলে আলম হোসেন ও কফিল উদ্দিনের ছেলে মোঃ ইউসুফ ওরফে ইউসুপ। এদের মধ্যে রায় ঘোষণাকালে আসামী ইউসুফ পলাতক রয়েছে।

গাজীপুর জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. মকবুল হোসেন কাজল জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালদৈ গ্রামের মোঃ আব্দুল বাতেন বেপারীর ছেলে মোঃ গিয়াস উদ্দিনকে তার সহপাঠি বন্ধু আলম ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে পাশর্^বর্তী নরসিংদীর মনোহরদী এলাকায় সার্কাস দেখার কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই নিখোঁজ হয় গিয়াস। এঘটনার পর গিয়াস উদ্দিনের বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করে দুর্বৃত্তরা। দাবিকৃত মুক্তিপণ না পেয়ে আসামিরা গিয়াস উদ্দিনকে হত্যা করে লাশ গুম করে রাখে। এদিকে ছেলের খোঁজ না পেয়ে তার বাবা ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে কাপাসিয়া থানা পুলিশ। গিয়াস উদ্দিন স্থানীয় ঘাগুটিয়া চালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। এঘটনায় পুলিশ গিয়াস উদ্দিনের সহপাঠি বন্ধু আলম ও ইউসুফকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গ্রেফতারকৃত ইউসুফ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধি দেয়। আসামীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার প্রায় তিনমাস পর পুলিশ কাপাসিয়ার মাধুলী বিল থেকে বস্তাবন্ধি অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনের কংকাল ও লুঙ্গি উদ্ধার করে। তদন্ত শেষে পুলিশ এ ঘটনায় ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজন মামলা চলাকালীন অবস্থায় মারা যায়। আদালত ওই মামলায় শুনানী ও ২০ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ ফজলে এলাহী ভ’ইয়া রায় ঘোষণা করেন। আদালত রায়ে আসামী আতাউর, আলম ও ইউসুফকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। এছাড়াও ওই তিন আসামীর প্রত্যেককে ৩৮৭ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, পেনাল কোডের ৩৬৫ ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং পেনাল কোডের ২০১ ধারায় ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৩ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। এ মামলায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় একই এলাকার জজ মিয়া ও তার স্ত্রী সমেজা খাতুন ওরফে বিলকিসকে খালাস প্রদান করা হয়। রায় ঘোষণাকালে আসামী মোঃ ইউসুফ পলাতক ছিল, তবে অন্য আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিল।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. মকবুল হোসেন কাজল। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সুষমা রাণী মন্ডল। এদিকে রায় ঘোষণার পর আসামীদের স্বজনরা আদালত প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।