1465481155000

গুপ্তহত্যাসহ সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড গুলো ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতেই হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে বিএনপি।হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব তথ্য থাকলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের কেন বিচার হচ্ছে না এ প্রশ্নও তুলেছে দলটি।বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে গুপ্তহত্যার ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে দুটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট (সরকারপ্রধান) হিসেবে তাঁর কাছে এ বিষয়ে সব তথ্য আছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এক দিন পর বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে গুপ্তহত্যার ঘটনাগুলোতে সরকারের সংশ্লিষ্টতার পাল্টা অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির মহাসচিব বলেন,সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতেই হয়েছে। হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পরও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি সরকার। অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্য দিবালোকে হয়েছে। এ ধরনের নারকীয় ঘটনার ন্যূনতম হদিস বের করতে না পেরে চরম হতাশ হয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছেন। মহাসচিব আরও বলেন, নিখুঁতভাবে সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীদের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিত না থাকলে কোনোভাবে সম্ভব হতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে মহাসচিব বলেন,প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন,তাঅনৈতিক,রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ও উদ্দেশ্যমূলক। হত্যাকারীদের শনাক্ত না করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়ে ফায়দা হাসিল করাই ক্ষমতাসীনদের মূল উদ্দেশ্য। হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব তথ্য থাকলে তিনি নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন বাবু,সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনো তথ্য পেলেন না কেন?

বিএনপির এই নেতা বলেন, বিরোধী দলের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে দোষ চাপালে বিষয়গুলো অন্য দিকে চলে যাবে। আজ পর্যন্ত কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। যাদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে, তাদের সেভাবে কখনোই চিহ্নিত করতে দেখা যায়নি। তারাই যে প্রকৃত হত্যাকারী বা ঘটনার জন্য দায়ী, তা জানা যায়নি। তিনি বলেন, এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনগুলোয় তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) কিছু লিখিত বক্তব্য থাকে, সেটাই তিনি আওড়ে যান। তিনি সেটাই পাঠ করেছেন। বিরোধী দল বিএনপিকে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত করার উদ্দেশ্য কী?

উদ্দেশ্য একটাই বিএনপি উদারপন্থী, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং বিএনপি এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে সফল হয়েছে এবং গণতন্ত্রের জন্য এখনো সংগ্রাম করে চলেছে। তাই বিএনপিকে যেভাবেই হোক নির্মূল করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে তারা প্রথম থেকেই কাজ করে আসছে। সরকার একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে। সরকার জোর করে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে সংসদ গঠন করেছে। সেই সংসদের কোনো জবাবদিহি নেই। ৫ শতাংশ লোকও সেই ভোটে অংশগ্রহণ করেননি। তারা (সরকার) জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেই পরবর্তী সময়ে প্রতিটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তারা তাদের প্রার্থীকে জয়ী করে নিয়ে এসেছে।

আন্তর্জাতিক মহলসহ সচেতন মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর কৌশল নিয়েছেন উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, এখন যখন সমগ্র পৃথিবী এই বিষয়গুলোর ওপর নজর দিয়েছে, যখন তারা বাংলাদেশে এসে গুপ্তহত্যা, সহিংসতা, জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে কথা বলছে, সোচ্চার হচ্ছে, দেশের মানুষ যখন সোচ্চার হচ্ছে, তখন আবার একইভাবে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জনগণের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে বিভ্রান্ত করার জন্য বিএনপিকেই দোষ চাপাচ্ছেন।

দেশে অব্যাহত গুপ্তহত্যার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

বিভিন্ন হত্যার প্রসঙ্গ তুলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, তার কাছে যদি এতই তথ্য থাকে, তা হলে খুনের তথ্য পান না কেন?

ফখরুল দাবি করেন, বিএনপি জঙ্গিবাদকে কখনোই সমর্থন করে না। বলেন, একে সমূলে নির্মূল করার জন্য সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে দেশে যেসব গুপ্তহত্যা হয়েছে তার সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সরকারের কাছে ওইসব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তোলেন, হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যদি এতই তথ্য থাকে, তা হলে নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবু, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড এবং নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো তথ্য পাননি কেন?

তিনি বলেন, কোনো অঘটন ঘটলেই প্রধানমন্ত্রী বরাবরের মতো বিএনপিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই বলে দেন বিএনপি জড়িত। এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের তথ্য বের করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েই সরকার বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করছে।

জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার বারবার বলছে তারা জঙ্গি দমন করেছে, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে জঙ্গিদের এত তীব্র উৎপাত শুরু হলো কী করে? নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেও কিভাবে তারা জীবনবিনাশী কর্মকাণ্ড একের পর এক সংঘটিত করে যাচ্ছে?

জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের মন্ত্রীরা একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য রাখছেন, এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের স্ববিরোধী কথাবার্তার মধ্যেই মনে হয়, কোথাও কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জঙ্গিবাদ কাউকেই সাহায্য করবে না। জঙ্গিবাদ দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে দেবে। চোখের সামনে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অবস্থা দেখছি। তাই সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদেরকে এর সমাধানের পথ বের করতে হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, যুবদলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক কাজী রফিক, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।