পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর দেড় শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ করার দাবি করেছে বিজিএমইএ। তবে চলতি অর্থবছরের মতো উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ হলেও সংগঠনটির আপত্তি নেই।শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠনটি।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, উৎসে কর না কমালে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।বিজিএমইএর সভাপতি বলেন,পোশাক কারখানাগুলো গড়ে তিন শতাংশ মুনাফা অর্জন করে। এর মধ্য থেকে দেড় শতাংশ উৎসে করে দিলে মোট কর হার দাঁড়াচ্ছে ৫০ শতাংশ। এত বেশি কর হার ব্যাংক, বিমাসহ অন্য শিল্প কিংবা সেবা খাতে নেই।আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর দেড় শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী । পোশাক শিল্প নানা সমস্যায় জর্জরিত মন্তব্য করে এই খাতে উৎসে কর না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিজিএমইএ নেতারা।
বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপনের পরদিন শুক্রবার বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাজাটে শিল্পকে উৎসাহিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর পরিপন্থি কিছু পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের রপ্তানিতে উৎসে কর্তিত করের হার ০.৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।যার অর্থ দাঁড়ায় প্রত্যক্ষ কর ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি। এটা শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে পোশাকখাতে উৎসে কর ধরা হয় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। গত অর্থবছর তা বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হলেও গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পরে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়। আর এবার বাজেটে তা বাড়িয়ে ১.৫০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে।সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাত যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, সে অবস্থা থেকে এখনও উত্তরণ ঘটেনি। তাই ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের মতো শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হারে উৎসে কর চালু রাখার দাবি জানান তিনি। আর তা সম্ভব না হলে গত বছরের মতো শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ রাখতে বলেন।
পোশাক খাতের দুরবস্থার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে পোশাক পণ্যের দরপতন অব্যাহত আছে। অপর দিকে প্রতিবছর উৎপাদন খরচ ৮/১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। আবার প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ডলারের বিপরিতে টাকার মান শক্তিশালী হতে থাকা লোকসানের আরেক কারণ হিসাবে দেখা দিয়েছে।গত চার বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের দেওয়া কারখানা সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।এই পরিস্থিতিতে উৎসে কর বৃদ্ধি পোশাক খাতকে আরও সঙ্কটে ফেলবে। বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা হারিয়ে ইতোমধ্যে ৬১৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, আরও ৩১৯টি বন্ধ হওয়ার পথে। এভাবে করের বোঝা বাড়লে কারখানা টিকে থাকতে পারবে না, বলেন সিদ্দিকুর রহমান।প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক খাতে কর্পোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে।বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে আমাদের দাবি ছিল এই কর হার ১০ শতাংশে নিয়ে আসা।