02-06-16-PM_Finance Minister_Parliament-3

প্রতিবছরই প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী পণ্যের দাম নির্ধারণ হয়। এতে করে দাম কমে এমন পণ্যের সংখ্যা হাতেগোনা হলেও যথারীতি বেশ কিছু পণ্যের দাম হুড়হুড় করে বেড়ে যায়।এবারও প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দাম বাড়তে পারে এমন পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- মোবাইল সিম ও রিম, ওয়াশিং মেশিন, সিগারেট তৈরির যন্ত্রপাতি, এয়ারকুলার, ট্রান্সফরমার, ইউপিএস, আইপিএস, বিডি সিগারেটের গুল, জর্দা, তামাকজাত পণ্য, হাতে তৈরি বিস্কুট, ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, বায়োমেট্রিক স্ক্যানার, মশা মারার ব্যাট, আমদানিকৃত চাল,হোটেল নির্মার্ণের আধুনিক যন্ত্রাংশ এবং কাগজ ও কাগজজাতপণ্য, মেডিকেলের যন্ত্রাংশ, ইসিজি ও আল্টাসোনোগ্রাম রেকর্ডিং পেপার, বাস ও লডির টায়ার টিউব, ট্যালগম পাউডার, শিশুদের আমদানিকৃত বই, আলু-গম ও ভুট্টার স্টার্চ এবং রাবার।

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন শুরু করেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।উপস্থাপন শুরুর কিছুক্ষণ আগে জাতীয় সংসদ ভবনে আগামী সরকারের আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবিত এ বাজেট প্রস্তাবনা অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

এ অর্থবছরে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় এ বছরের বাজেটের আকার ৪৪ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বেশি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তৃতীয় বাজেট এটি। তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এর ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্যের দাম আগের চেয়ে বাড়বে।

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তামাক পণ্যের ওপর এ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ৪৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ এবং এর ওপর দুটি স্তরে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ৬১ ও ৬৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬২ ও ৬৪ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।বর্তমানে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির বাজারমূল্য ৭ টাকা ৬ পয়সা আর ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার প্রতি প্যাকেটের মূল্য ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। এ দুই ধরনের বিড়ির ওপর সম্পূরক শুল্ক হার ২৫ ও ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ ও ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এতে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির দাম হবে ১০ টাকা আর ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার প্রতি প্যাকেটের মূল্য হবে ১২ টাকার ওপরে।

এ ছাড়া জর্দা ও গুলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ দুটি পণ্যের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পণ্যের উপর কর প্রত্যাহার বা কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে এসব পণ্যের বাজারমূল্য কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।পণ্যগুলো হলো: দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির উপকরণ, নির্মাণ খাতের বোল্ডার স্টোন, ক্রাশড স্টোন, ফেরো অ্যালয়, বিলেট, বার রড, অ্যাঙ্গেল, ফ্লাই অ্যাশ । এছাড়া অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং দরজা।

রাসায়নিক খাতের পেট্রোলিয়াম জেলি, প্যারাফিন ওয়াক্স, কাঁচা রাবার, রাবার প্রসেস অয়েল, গ্লোসি স্টার্চ, গাম রেজিন।ইলেক্ট্রিক্যাল খাতের ইউরিয়া রেজিন, ডিওপি, রোল আকারের অ্যাডহেসিভ টেপ, ফাইবার গ্লাস, কম্প্রেসারের যন্ত্রাংশ ও উপকরণ। প্লাস্টিক শিল্পখাতে কিছু উপকরণেও শুল্কহ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।পরিবহন খাতে মোটরসাইকেল, হিউম্যান হলার, এলপিজি রোড ট্যাংকার। এছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড গাড়িতে কর কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে বায়োগ্যাস প্লান্টের উপকরণ যেমন:, স্টোভ, এয়ার টাইট স্টোরেজ, ব্যাগ উইথ জিপার, বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার, প্লাস্টিক ও গ্লাস ফাইবারের তৈরি গ্যাস সিলিন্ডার।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সিম কার্ড, স্ক্র্যাচ কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও সমজাতীয় অন্যান্য স্মার্টকার্ড উৎপাদনে ব্যবহার্য কতিপয় উপকরণ।ওষুধ শিল্পে ব্যবহার্য স্পেশাল টাইপ রেফ্রিজারেটর,ল্যাবরেটরি স্ট্যাবিলিটি/হিউমিডিটি চেম্বারে মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্প কারখানা ও যানবাহরে ব্যবহার্য গ্রিজ।পাটজাত পণ্য, প্রাকৃতিক রাবার, অ্যাম্বুলেন্স পরিবহণ সেবা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হুইট ক্রাশারের যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল খাতের গ্রে কাপড় ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ও ক্যালেন্ডারিং সেবা খাত।এছাড়া পদ্মাসেতু ও আরো বৃহৎ প্রকল্পে ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধির স্বার্থে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনির পাথরের উপর থেকে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।