ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে ৬২৫ ইউপির প্রাথমিক ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩৮২টিতে ও বিএনপি ৬৬ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছে।স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এই পর্বে ১৬৮ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের অনেকেই আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নিজেরা প্রার্থী হয়েছেন। শনিবার সারাদেশে ৪৫টি জেলার ৭১৭টি ইউনিয়নে এ নির্বাচন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় নিহত হয়েছেন দুই প্রার্থীসহ অন্তত ১১ জন।নবম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম পাঁচ ধাপে ঘোষিত ৩ হাজার ২৯০টি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ২ হাজার ১৯৫টিতে। দলটি এককভাবে ৬৭ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জয় পেয়েছে ৩১৫টিতে। অর্থাৎ বিএনপি ১০ শতাংশের কম ইউপিতে জয় পেয়েছে।
এবারের নির্বাচনের পাঁচ ধাপে ৬৯৭টি ইউনিয়ন পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। যদিও তাঁদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। এর বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা) ৪১টি, জাসদ ৭টি, জাতীয় পার্টি ( জেপি) ৪টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৪টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাকের পার্টি ও সিপিবি একটি করে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জিতেছে।নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলীয় প্রার্থীর জয়ের কারণ সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা। উন্নয়নের প্রতি যে মানুষের সমর্থন আছে, তা ফলাফলে প্রতিফলন হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জরিপ সংস্থাও এই আস্থার কথা বলেছে। ৮০ ভাগ মানুষের আস্থা এই সরকারের প্রতি আছে। এ কারণে তাঁদের দল এত ভোট পেয়েছে।জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেমন ভোট হয়েছে, তা সবাই দেখেছে। এই ভোটের ফল নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নষ্ট হয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে ভোট কারচুপির মহোৎসব করেছে।প্রথম ধাপে ৬৮৫টি ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫১৮টিতে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় ধাপে, আওয়ামী লীগ ৬২৯টি ইউপির মধ্যে ৪৪৭টিতে জিতেছে। শতকরা হিসেবে ৭১ শতাংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছে। তৃতীয় ধাপে, ৬১০টির মধ্যে ৩৯৫টিতে জয়ী হয়েছে। এটি মোট চেয়ারম্যান পদের প্রায় ৬৫ শতাংশ। চতুর্থ ধাপে ৬৪ শতাংশ চেয়ারম্যান পদে জিতেছে আওয়ামী লীগ। এই ধাপে ৬৮৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৩৯টিতে জিতেছে দলটি। সর্বশেষ গতকাল শনিবার পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে ৫৮ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছে দলটি। ঘোষিত ৬৮৩টি ইউপির মধ্যে ৩৯৬টিতে জয় পেয়েছে দলটি।অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রথম ধাপে প্রায় ৭ শতাংশ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছিল। এরপর প্রতিটি ধাপে দলটি প্রায় ১০ শতাংশ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পাচ্ছে। বিএনপি প্রথম ধাপে ৪৭টি, দ্বিতীয় ধাপে ৬১, তৃতীয় ধাপে ৬০, চতুর্থ ধাপে ৭০ এবং পঞ্চম ধাপে ৬৭টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে।তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রথম ধাপের তুলনায় পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের জয় কমতে থাকলেও এখনো তা অস্বাভাবিক। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কারা জয়ী হচ্ছে এটি বিষয় নয়। বিষয়টি হলো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হচ্ছে না। কারচুপি হচ্ছে। ফলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। তিনি বলেন, এই ভোটে স্বাভাবিক পন্থায় বিজয়ী হচ্ছেন, এই সংখ্যা বেশ কম। একটি বড় অংশ কারচুপি, বিনা ভোটে নির্বাচিত হচ্ছে, এটা খারাপ দিক। সহিংসতা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সবাইকে গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার দুপুর পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রাথমিক ফলাফল এবং ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৩৯ জন মেয়র প্রার্থীর তথ্য মিলিয়ে মোট ৬৬৪ ইউনিয়নের ফলাফল রয়েছে ইসির হাতে। বাকি ৫৩ ইউপির মধ্যে অধিকাংশের ফল আটকে আছে কেন্দ্র স্থগিত হওয়ার কারণে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, পঞ্চম ধাপে ১ কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজারের বেশি ভোটারের মধ্যে ৮৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭ জন ভোট দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।প্রাথমিক ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৩৮২ ইউপির চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আরও ৩৯ জনকে যোগ করলে এ ধাপে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হচ্ছেন ৪২১ জন।
স্বতন্ত্র ১৬৮ জন, বিএনপির ৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ৮ জন এবং অন্য দলের একজন প্রার্থী এই ধাপে বিজয়ী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে।নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, সন্ধ্যার মধ্যে পঞ্চম ধাপের সব ইউপির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে ইসির অনুমোদন সাপেক্ষে তা প্রকাশ করা হবে।স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূলের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। ফেব্র“য়ারিতে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন ঘিরে সংঘাত সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে শয়ের কাছাকাছি। দেশের চার হাজারেরও বেশি ইউপি’র মধ্যে নির্বাচনযোগ্য তিন হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শেষ হয়েছে পাঁচটি ধাপে।নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ ও চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট বাক্সে পড়ার হিসাব নিয়ে পঞ্চম ধাপও একই কাতারে রয়েছে।প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯৪ জন ও বিএনপির ৫০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১০৯ ইউপিতে। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ জন।দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৩৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৩৬৬ জন; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯ জন। এ ধাপে বিএনপি প্রার্থীরা ৬০টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন; স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯ ইউপিতে।চতুর্থ ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪০৫ জন জয়ী হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ৩৫ জন। বিএনপির ৭০ জন ও ১৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন এ ধাপে।পঞ্চম ধাপে আওয়ামী লীগ থেকে ৩৮২ জন ভোটে এবং ৩৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপির ৬৬ জন, স্বতন্ত্র ১৬৮ জন, জাতীয় পার্টির ৮ জন এবং অন্য দলের একজন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। শেষ ধাপে ৪ জুন ৭২৭ ইউপিতে ভোটের মধ্য দিয়ে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।