সাতক্ষীরা

বাড়ির গোয়াল ঘর বানাতে আশা এনজিও থেকে ঋন নেয় মহিউদ্দিন মোড়ল। পেশায় একজন চাতাল শ্রমিক। বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের চেলারডাঙ্গা গ্রামে।সে মোঃ ফয়জুল মোড়লের পুত্র। ইতিপূর্বেও ওই সংস্থা থেকে সে আরও একবার ঋন গ্রহন করে। সেবার ঠিকমত কিস্তি দিয়ে ঋনটি পরিশোধ করে। সরেজমিন ঘুরে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আশা এনজিও ব্রহ্মরাজপুর শাখা থেকে প্রায় ৩ মাস পূর্বে মহিউদ্দিন ঋন নেয় বিশ হাজার টাকা।

সাপ্তাহিক কিস্তি পাঁচশত পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু কিছুদিন আগে চাতাল মালিক তার কাজ থেকে বাদ দেওয়ায় হয়ে যায় বেকার। অন্যদিকে মাস খানেক পূর্বে তার ছোট পুত্র সেলিম হোসেন (২০) ব্রেনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে এখন মানসিক রোগী। এতে করে মহিউদ্দিন এখন চরম অভাবগ্রস্থ। বর্তমানে মহিউদ্দিনের দুইটি কিস্তি বকেয়া। মানসিক প্রতিবন্ধী পুত্রের চিকিৎসার খরচ যোগাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করছে। গ্রামের লোকের সাহায্যে চলছে তার চিকিৎসা খরচ। এসব বিষয় সরেজমিনে অবলোকন করার পরও আশা এনজিও’র কর্মীদের লাঞ্চনা-গঞ্জনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না মহিউদ্দিন। অনেক কাকুতি-মিনতি করেও সময় চেয়ে কিছুতেই যেন পার পাচ্ছে না। এক মাস সময় পেলে বকেয়া সব কিস্তি পরিশোধের কথা বললেও কোন কাজ হচ্ছে না। এসব কিছু শুনতে আশা এনজিও’র কর্মীরা নারাজ। তাদের একটাই সাফ কথা সমিতির বকেয়া কিস্তির টাকা চাই। বিভিন্ন অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেও তাদের কাছে কোন লাভ হয়নি। বরং হুমকি-ধামকি ও অনবরত চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। কিস্তির টাকা আদায়ে বাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার আশা এনজিও’র কর্মীরা খুঁজে বেড়াচ্ছে তাকে। এমনকি মোবাইলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। কিস্তির টাকা দিতে না পারায় তাদের অত্যাচারে লোক-লজ্জার ভয়ে মহিউদ্দিন এখন বাড়ি ছাড়া।

সকল মানবীয়তা এখানে হার মেনে গেছে। আশা এনজিও’র ব্রহ্মরাজপুর শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক তারক পাঠকের নেতৃত্বে মাঠকর্মী শেখ মঞ্জুরুল আলম, কামরুজ্জামান ও জিয়াউর রহমান মিলে বিভিন্ন জায়গায় মহিউদ্দিনকে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে শুক্রবার ব্রহ্মরাজপুর বাজারের গাজী মার্কেট এলাকায় দেখা মেলে তার সাথে। তাকে ধরে নিয়ে যেতে চায় অফিসে। এ সময় স্থানীয় লোকজনের রোষানলে পড়ে আশা এনজিও’র কর্মীরা তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মোবাইলে এ প্রতিবেদক মহিউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ও সব ঘটনার বর্ণনা দেন। আশা এনজিও’র ব্রহ্মরাজপুর শাখা ব্যবস্থাপক আমেনা খাতুন নিজেও টাকা আদায়ের জন্য মহিউদ্দিনের বাড়িতে গেছে। গত কয়েকদিন তাদের এ তৎপরতা গ্রামের মানুষ মুখ বুঝে দেখে আসছে। অপরদিকে নিরীহ মহিউদ্দিন আশা এনজিও’র কর্মীদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। টাকা আদায়ে তারা যেন নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে আশা এনজিও’র ব্রহ্মরাজপুর শাখা ব্যবস্থাপক আমেনা খাতুন সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি। ব্রহ্মরাজপুর ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার রেজাউল করিম মিঠু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সামান্য টাকার জন্য পশুত্বের মত আচারন করছে আশা এনজিও’র কর্মীরা।