চার ধাপের মতো পঞ্চম দফার ভোটেওসংঘর্ষ,ব্যালট ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় চার জেলায় চেয়ারম্যানপ্রার্থীসহ নিহত হয়েছে ৮জন।এ নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত সাড়ে ৩ মাসে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৭-এ। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পঞ্চম ধাপে দেশের ৪৫জেলার ৯৩ উপজেলায় ৭২০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। টানা ৮ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ শেষে এখন চলছে গণনা। শনিবার (সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত।এতে এসব ইউপির প্রায় সোয়া ১ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি)নির্বাচনে শনিবার নির্বাচনী সহিংসতায় জামালপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জামালপুরে এক কিশোরসহ ৪ জন, নোয়াখালীতে এক বৃদ্ধসহ ২ , চট্টগ্রামে এক সদস্য প্রার্থী ও কুমিল্লায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যু হয়। এসব ইউপিতে ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখের কিছু বেশি। ।এক লাখেরও বেশি নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করছেন। চলমান নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোটবর্জন করেছেন অনেক প্রার্থী। শনিবার ৫৩ ইউপিতে ভোট গ্রহন স্থগিত করছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচনে ৭২০ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধী প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৫৪। সাধারণ সদস্য পদে ২৭ হাজারের বেশি ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে ১৫ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১ হাজার ৭২৭ এবং ১ হাজার ৫২২ লড়ছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে ৭২৬ ইউপিতে, ৬২৯ ইউপিতে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১৭৭, জাসদ ২১, বিকল্পধারা ২, ওয়ার্কার্স পার্টি ১৩, ইসলামী আন্দোলন ১২২, জেপি ২, ইসলামী ফ্রন্ট ১১, এলডিপি ৬, সিপিবি ৫, জেএসডি ১, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৬, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৭ এবং আরেক দল প্রার্থী দিয়েছে এক ইউপিতে।আগের মতো পঞ্চম ধাপেও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৪২ প্রার্থী বিনা প্রতদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপে বিনা ভোটে দলের ৫৪, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪, তৃতীয় ধাপে ২৯ এবং চতুর্থ ধাপে ৩৫ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৯৩ প্রার্থী জয় পেয়েছেন ভোট ছাড়াই। গত ২২ মার্চ, ৩১ মার্চ, ২৩ এপ্রিল ও ৭ মে বিক্ষিপ্ত গোলাযোগ ও ব্যপক অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে চার ধাপের ভোট হয়। শনিবার অনুষ্ঠিত হল পঞ্চম ধাপের ভোট। কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুয়ায়ী আগামী ৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ ও শেষ ধাপের নবম ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
জামালপুর:জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কুঠারচর ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাকিরুজ্জামান রাখাল ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে জাল ভোট দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিনজন নিহত হন।নিহত ব্যক্তিরা হলেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার শেখপাড়ার আফজাল শেখের ছেলে মাজেদ মিয়া (১৪), একই এলাকার নূর ইসলাম (৫৫) ও কুতুবের চর গ্রামের জিয়া (৩২)। জামালপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নিজামউদ্দিন ৪ জনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।জামালপুরের এসপি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছিল। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়ার সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে হামলা চালান। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য, তিন আনসার সদস্যসহ আটজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১০০টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণও স্থগিত আছে।নিহত কিশোর মাজেদের চাচা কালাম মিয়া বলেন, তাঁর ভাতিজা ভোট দেখার জন্য ওই কেন্দ্রে যায়। সংঘর্ষ বাধলে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে মারা যায়। তারপর সেখান থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
নোয়াখালী : জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের রাজগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই বৃদ্ধের নাম সৈয়দ আহম্মেদ (৬৫)। এছাড়া জিততলী ইউপির আওয়ামীলীগৈর প্রাথীর সমর্থক ছাত্রলীগ শাকিল নামের আরেকজন মারা গেছেন । প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্য, কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের ধাওয়া দেয়। ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন সৈয়দ আহম্মেদ। ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন চৌধুরীর ভাষ্য, মাথায় আঘাতের কারণে সৈয়দ আহম্মেদ মারা যান। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ বলেন, ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকার দুই নম্বর বড়উঠান ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. ইয়াসিন (৩৫) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, নির্বাচনী সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফকিরনির হাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বেলা দেড়টার দিকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বলেন, ইয়াসিনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পটিয়া (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের পটিয়ার কর্ণফুলী থানার এলাকার চর পাথরঘাটা ইউনিয়নে ছয় শ ব্যালট পেপার, সিলসহ আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবের আহমেদকে আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম তাঁকে আটক করেন।স্থানীয় লোকজন বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলার সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবের দুই শ ব্যালট পেপার ও সিল নিয়ে টয়লেটে ঢুকে পড়েন। বিষয়টি জানতে পেরে ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব তাঁকে টয়লেট থেকে বের করে আটক করেন। পরে ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যবহৃত গাড়ি থেকে আরও দুই শ ব্যালট পেপার পাওয়া যায়।জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম বলেন, সাবেরকে কর্ণফুলী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা : জেলার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নে বিএনপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো.কামাল উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।আজ বেলা তিনটার দিকে বলরামপুর ইউনিয়নের নাগেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। ওই ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের এসআই আবদুল আউয়াল সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।নিহত কামাল উদ্দিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী মো. নূর নবীর সমর্থকেরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিস্তারিত জেনে পরে বলব। এদিকে, দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা, ও বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সাতানি ইউনিয়নের স্বরস্বতিচর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ১০ জন। এসময় সাময়িক ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকলেও পরে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের কলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুল্লাহ বাহার ও স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী ইবরাহিমের সমর্থকরা। এ সময় উভয় পক্ষের কয়েক শত সশস্ত্র সমর্থক টেটা নিয়ে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে। এছাড়াও তারা কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় ও বেশকিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম র্যাব-পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।এছাড়াও একই উপজেলার মাছিমপুর আর আর ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রের বাইরেও কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় আওয়ামী লীগ বিদ্রোাহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ও লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থকরা।এদিকে বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা ইউনিয়নের বয়েরপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মেম্বারপ্রার্থী লুৎফুর রহমানের মাথা ফাটিয়ে দেয়। এসময় ভোটারদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া:পঞ্চম দফার ইউপি নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও সদর উপজেলার ৮ টি কেন্দ্রে সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।এদিকে নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ বিএনপি মনোনীত চারজনসহ ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।সকাল ১০টায় সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সিতানগর সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঙুর হাজারীর সমর্থকরা প্রাকাশ্যে সীল মারে। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান লিটনের সমর্থকরা বাঁধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।অন্যদিকে সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বিলকেন্দুয়াই গ্রামে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭ জন আহত হয়।এছাড়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে, সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, তালশহর (পূর্ব) ইউনিয়নের অষ্টগ্রামে, কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের শিকারপুর, বাদৈর ও বিনাউটি ইউনিয়নের ধামসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে সংঘর্ষের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর গুলিতে রাসেল মিয়া নামে একজন মেম্বার প্রার্থী আহত হয়। এসব সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়।সংঘর্ষে আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এম মধ্যে গুরুতর আহত ৬ জনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এদিকে কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগে সদর উপজেলার নাটাই (উত্তর) ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কাশেম, তালশহর (পূর্ব) ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম, রামরাইল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান সেলিম ও কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী একেএম ফরহাদ, বায়েক ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল হাসান নির্বাচন বর্জন করেন।
নাটোর: নাটোরের দুই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা ও এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে তাঁরা ভোট বর্জন করেছেন বলে দাবি করেন। এ ছাড়া চারটি পৃথক স্থানে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পোলিং কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ভোট গ্রহণ ব্যাহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, তাঁর এজেন্টদের ভোট গ্রহণের শুরুতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীরা কেন্দ্রে ঢুকতে দেননি। তাজপুর-জয়নগর উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নির্ধারিত পোলিং কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীদের দিয়ে পোলিং কর্মকর্তাদের কাজ করিয়ে নিয়েছেন। ফলে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অবাধ হয়নি। তাই তিনি নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে জানান।
প্রায় একই ধরনের কারণ উল্লেখ করে দুপুরের পরপরই শেরকোল ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান, শুকাশ ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস আকন্দ, হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের মুনছুর আলম, চৌগ্রাম ইউনিয়নের এস এম খালেকুজ্জামান, চামারী ইউনিয়নের রাশেদুল ইসলাম, ইটালি ইউনিয়নে মখলেছুর রহমান, কলম ইউনিয়নে সোয়াইব ইসলাম, লালোর ইউনিয়নে আব্দুর জব্বার ও ছাতারদিঘী ইউনিয়নের মাহাতাব উদ্দিন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী হজরত আলী সকাল সাতটায়, জোনাইল ইউনিয়নের আজিজুর রহমান ও বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের রেজাউল করিম দুপুরের পরপরই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। নিজ নিজ এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা তাঁদের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত জানান। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আলী আজগর খান তাঁদের প্রার্থীদের ভোট বর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর সংঘর্ষে ১১ জন, বড়াইগ্রাম সদর ইউনিয়নের উপশহরে পাঁচজন ও ধানাইদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে পাঁচজন আহত হন। ধানাইদহে সংঘর্ষের সময় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে কিছু সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নে কিষ্টপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আব্দুল হাকিম ও জহুরুল ইসলাম নামের আওয়ামী লীগের দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন আহত হয়। আহত ব্যক্তিদের নাটোরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নে কাগজে-কলমে একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের নাম রাখালগাছা জুনিয়র হাইস্কুল (প্রস্তাবিত) কেন্দ্র। শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় সরেজমিন গিয়ে এ ধরনের কেন্দ্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাখালগাছা গ্রামের লোকজন বলেন, বাস্তবে এ ধরনের বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। তবে রাখালগাছা গোরস্থানের আমবাগানের মধ্যে এই নামে শামিয়ানা ঝুলিয়ে একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
যেখানকার প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন সিংড়ার চলনবিল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানকার ভোটার ১ হাজার ৩০৩ জন। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো না থাকায় শামিয়ানা ঝুলিয়ে তিনটি কক্ষ তৈরি করে ভোট নেওয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেকটা উন্মুক্ত অবস্থায় ভোট গ্রহণ চলছিল। তবে ঝড়বৃষ্টি ও সংঘর্ষ না হওয়ায় এখানে ভোট গ্রহণ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
পোলিং কর্মকর্তার সংকট : সকাল সাড়ে ১০টায় সিংড়ার তাজপুর-জয়নগর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ছয়জন পোলিং এজেন্টের কেউই উপস্থিত হননি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কলম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল গণি বলেন,এখানে মোট পোলিং কর্মকর্তা ছয়জন। তাঁরা কেউ কেন্দ্রে আসেননি। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলীকে জানানো হয়েছে। তিনি আমাকে যেকোনো প্রকারে চালিয়ে নিতে বলেছেন। আমি স্থানীয় একজন ছাত্র, একজন শিক্ষক ও আনছার সদস্যকে ডেকে এনে পোলিং কর্মকর্তার কাজ করাচ্ছি। বিষয়টি বেআইনি হলেও ভোট গ্রহণের জন্য এটা তিনি বাধ্য হয়ে করেছেন বলে দাবি করেন। ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিনিধি জেলা প্রশাসককে জানালে প্রায় এক ঘণ্টা পর নির্বাচন অফিস থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এমন তিনজন সরকারি কর্মচারীকে সেখানে ভোট গ্রহণের জন্য পাঠান।
ওই কেন্দ্রের নির্বাহী হাকিম জাহিদুল ইসলাম বলেন, এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। সমন্বয়হীনতার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে পরে কিছু লোক নিয়োগ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ: পঞ্চম দফায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে তিন ইউনিয়নে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার বিকেল ৩টায় তারা এ ঘোষণা দেন। এ সময় তারা বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের এজন্টেদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে জালভোট প্রদান ও বিএনিপন্থি নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে এসব প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দুপুরে সোনারগাঁ কাঁচপুর ইউয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে জালভোট, কেন্দ্র দখল ও বিএনপির প্রার্থীদের বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট করে বিএনপির প্রার্থী ফজলুল হক। এছাড়াও সোনারগাঁ পিরোজপুর ইউয়নের বিএনপির ধানের শীর্ষের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করে। একই সঙ্গে বর্জন করেন সোনারগাঁ সাদিপুর ইউয়নের বিএনপির প্রার্থী কামরুজ্জামান মাসুমও। সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর জানান, কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন থেকে প্রার্থীরা সরে এসেছে।
সিরাজগঞ্জ : অনিয়মের দায়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার শুভগাছা ইউনিয়নের আছানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল হাসান এ দণ্ড দেন।শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলামের এজেন্টকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় তাঁর সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে তিনটি ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ আটটি গুলি চালায়।কাজীপুর উপজেলার খাসসুরিবের উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন আহত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজাম উদ্দিন মুন্নাকে (আনারস) পুলিশ আটক করেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। পরিবারের দাবি, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নির্বাচন চলাকালে চরচামিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র এলাকা থেকে মুন্নাকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ তাকে চন্দ্রগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা মুন্নাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। মুন্না ইউছুফপুর গ্রামের লেদু মিয়া মাষ্টারের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র ও পরিবারে দাবি, ঘটনার সময় জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোঃ নাসিম মিয়া নির্বাচনী মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্নাকে আটক করেন। মুন্না জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। নিজাম উদ্দিন মুন্নার বোন লিপন আক্তার বলেন, পুলিশ সবার সামনে থেকে আমার ভাইকে আটক করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় নিয়ে গেছে। প্রথমে তারা স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করছেন। থানায় গিয়েও ভাইয়ের স্বাক্ষাত পাচ্ছি না। আমি আমার ভাইকে সুস্থ্য অবস্থায় ফেরত চাই।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজিজুল হক বলেন, মুন্না নামের কাউকে আটক করা হয়নি। একই কথা জানালেন জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোঃ নাসিম মিয়া। প্রসঙ্গত, হাজিরপাড়া ইউনিয়নের ইউছুফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ব্যালট পেপার ছিনতাইকালে পুলিশের গুলিতে তিন যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় ওই কেন্দ্রে আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুল ইসলাম বাবুল পাটওয়ারীর নেতাকর্মীরা মুন্নাসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে। গুলিবিদ্ধরা ভোট দিতে কেন্দ্রে গেছেন বলে জানা গেছে।