নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।এ ঘটনায় গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।পিআর সাত্তার লতিফ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে এই প্রতিবেদন দেয়া হল।পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের জানান, শ্যামল কান্তির কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এটা আইনসিদ্ধ হয়নি বিধায় তিনি স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন।তিনি বলেন, আগামী রোববার এই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
মোতাহার হোসেন জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফরের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ এবং নারায়ণগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুস জামান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে মতামতসহ চার দফা সুপারিশ রয়েছে।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শ্যামল কান্তির কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল, যেটা বিধিবহির্ভূতভাবে করা হয়। এ কারণেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে, তিনি স্বপদে বহাল থাকতে পারেন।এছাড়া শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগকারী শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন একেক সময় একেক কথা বলেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।যেহেতু রিফাতের বক্তব্যে গরমিল পাওয়া গেছে, তাই বিতর্কিত বিষয়ের সত্যতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হতে পারে।মসজিদ থেকে মাইকে শ্যামল কান্তি ভক্ত সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে ১৮ মে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা ৩ দিনের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।একইসঙ্গে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান ও সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করার ঘটনায় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত এ রুল জারি করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়।এরপর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি শ্যামল কান্তি ভক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে পুনর্বহাল করে কমিটি বাতিল করে।এ ঘটনায় সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন স্থানে দোষীদের বিচার দাবিতে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে ।