দুর্নীতির মামলায় ২ জুন আদালতে হাজির না হলে বিচারকের আদেশ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে তার পরিণাম ভাল হবে না বলে সতর্ক দিয়েছে বিএনপি।বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে পরিণাম ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে মহানগর বিএনপির যৌথসভায় মির্জা আব্বাস এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করা হচ্ছে, এমন খবর শোনা যাচ্ছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা খুব সহজ হবে না। তাঁর গ্রেপ্তার মানুষ মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ যদি মনে করে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে দেশে শান্তি আসবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।
মহানগর বিএনপির এক যৌথ সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগর আহবায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম,দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। এই আওয়ামী সরকারের পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নাই, মানবতাবোধ বলে কিছু নাই। আমার ধারণা বিষয়টা খুব একটা সহজ হবে না।আমি স্পষ্ঠ ভাষায় বলতে চাই, দেশনেত্রীকে গ্রেপ্তারের পরিণাম খুব ভালো হবে না। দেশের মানুষ এটাকে সহজভাবে মেনে নেবে না।গত ১৯ মে ঢাকা তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২ জুন আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সেদিন অনুপস্থিত থাকলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে।
খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় ১৯ মে মামলায় তার আত্মপক্ষ সমর্থন পঞ্চম দফায় পিছিয়ে যায়।খালেদার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সেদিন আবারও সময়ের আবেদন করেন। ওই আবেদন শুনে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নতুন তারিখ ঠিক করে দিয়ে ওইদিন খালেদাকে হাজির হতে নির্দেশ দেন। নয়া পল্টনে সকাল সাড়ে ১১টায় মহানগর বিএনপির কার্যালয়ের মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন উপলক্ষে এই যৌথ সভা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে আগামী ৩০মে ও ১ জুন দুইদিন রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মহানগর বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবরের মতোই খাবার বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
সভায় মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে আমাদের বিএনপিকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। যেভাবে ছিল ১/১১ এর আগে, ১/১১ সময়ে। একই রকম চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।এ বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়ে এই বিএনপির নেতা বলেন, আমি খুব খেয়াল করছি, পত্র-পত্রিকায় বিভিন্নভাবে লেখা হচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে। এখানে-ওখানে গোপন বৈঠকের কথা লেখা হচ্ছে।আমি বিশ্বাস করি যে, এটা সবই মিথ্যা। কোনো একটি চক্র আগে থেকেই একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে বিএনপিকে একটা দলাদলি বা গ্র“পিয়ের মধ্যে ফেলার। কোনো একটা কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এই কাজটা, তারাই চক্রান্তটা করে বেড়াচ্ছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে, প্রতিদিন এমন খবর গণমাধ্যমে আসছে। কিন্তু পদ পেতে দলের নেতা-কর্মীদের তদবির থেমে নেই। তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলার জন্য কারও বাসায় আলোচনা হয় না। কাকে ওপরে নেওয়া হবে, কাকে কী দেওয়া হবে এসব নিয়ে আলোচনা। গয়েশ্বর বলেন, আন্দোলন করতে হলে পদ–পদবি দরকার হয় না। এক এগারোর সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমপি-মন্ত্রী কাউকে পাওয়া যায়নি, যাঁদের পাওয়া গেছে, তাঁরা ছিলেন জেলখানায়। বাকিরা বিদেশে, যে যেভাবে পেরেছেন জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। তখন তৃণমূলের কর্মীরাই সব মোকাবিলা করেছেন।মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।