item_0_নুরুল ইসলাম নাহিদ

দেশের পরীক্ষা থেকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা। একই সঙ্গে তাঁরা নোট, গাইডবই বন্ধ, শিক্ষাক্রম সংশোধন করে বইগুলো সহজভাবে তৈরি, প্রশ্নব্যাংক তৈরি করে সেখান থেকে পরীক্ষা নেওয়াসহ আরও বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন।বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদেরা এসব পরামর্শ দেন। এর আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।বর্তমানে পরীক্ষার প্রশ্ন দুই ভাগে করা হয়। এর মধ্যে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৪০ নম্বর এমসিকিউ এবং ৬০ নম্বর সৃজনশীল পরীক্ষা হয়। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী বছর থেকে এমসিকিউ ১০ নম্বর কমানো হবে।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষাবিদদের এই পরামর্শ অনুযায়ী তাঁরা এখন কর্মপন্থা ঠিক করবেন। তবে এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে তাঁরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিক্ষাবিদদের পরামর্শ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সাহস জোগাবে।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সহজপাঠ্য বই তৈরির বিষয়ে আমারা কাজ করছি। সৃজনশীলকে আরো চমৎকার করার ক্ষেত্রে আপনাদের মূল্যবান মতামত আমাদের সাহায্য করবে। আমরাও চেয়েছি এমসিকিউ বন্ধ করতে, আপনাদের পরামর্শে সে কাজটি আরো ত্বরান্বিত হবে।শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, ড. ফরাস উদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ৫ম শ্রেণিতে ৬টি বই। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১২টি বই। আবার দেখা যায় স্কুলের শিক্ষকরা বই লিখে ক্লাসে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়। এতে দেখা যায় বই ১৮/২০ হয়ে গেছে। এসব অপ্রয়াজনীয় বই বাদ দিতে হবে।

সৃজনশীলের নামে বইগুলোকে জটিল করা হয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে চমৎকার বই প্রণয়ন করতে হবে। পিইসি, জেএসসির নামে কোচিং গাইড বাণিজ্যের সুযোগ হয়েছে। এগুলো বন্ধ করতে শ্রেণিপাঠের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তরা।নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি এবং শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মারধর বন্ধে নেয়া নীতিমালার কার্যকর প্রয়োগের ওপর জোর দেন উন্নয়নকর্মী রাশেদা কে চৌধুরী। প্রয়োজনে নীতিমালাগুলো প্রত্যেকটি স্কুলে টাঙানোরও পরামর্শ দেন তিনি।অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের কারণে নকলের প্রবণতা বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য এমসিকিউ প্রশ্নের নম্বর কমিয়ে আনার পক্ষেও মত দেন। তিনি বলেন, ‘এমসিকিউ ১৫-তে নামিয়ে আনতে হবে। নকল ঠেকাতে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নও দুই বা তিন বাক্যে করতে হবে। এমসিকিউ বাদ দেয়া গেলে আরো ভালো হয়।’

এরপর শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেনের সঞ্চালনায় সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সহজপাঠ্য বই তৈরির বিষয়ে আমারা কাজ করছি। সৃজনশীলকে আরো চমৎকার করা ক্ষেত্রে আপনাদের মূল্যবান মতামত আমাদের সাহায্য করবে। আমরাও চেয়েছি এমসিকিউ বন্ধ করতে আপনাদের পরামর্শে সে কাজটি আরো ত্বরান্বিত হবে।মাধ্যমিকের শিক্ষকদের যোগ্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, মেধাবীদের টার্গেট থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার। মাধ্যমিকে মেধাবী শিক্ষক খুব আসে না। যারা আসছে তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে তুলছি। শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। শিক্ষা পেশায় সম্মানী বাড়ানোর ফলে মেধাবীদের অনুপ্রেবশ বাড়বে বলে আশা করছি।এসময় তিনি প্রশ্ন ব্যাংক তৈরির প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। এ বিষয়ে আরো আলোচনা সাপেক্ষে প্রস্তাবটি ভেবে দেখবেন বলে জানান মন্ত্রী। শিক্ষার উন্নয়নে মন্ত্রী সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলেন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার গুণগতমানে আমূল পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।