সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের হয়। গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রাব্বি বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এর বেশি কিছু তিনি জানাতে পারেননি।এর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স টেলিকম ভবনে এক কর্মশলা শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম জানিয়েছেন, ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে সরকারকে অজনপ্রিয় করে পতন ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। এটা রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল। তাই আজ গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রুজু হচ্ছে।
আইজিপির বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলাটি হয়।প্রসঙ্গত, গত ১৫ মে বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরীকে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে যুক্ত হওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।ইসরায়েলের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার অনুমতি দিয়েছে জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক বলেছেন, বৃহস্পতিবারই এ মামলা হবে।দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতাদের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অজনপ্রিয় করে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে চেয়েছিল। এ ধরনের প্রমাণ আমরা প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি। আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানি বাদী হয়ে গুলশান থানায় এই মামলা করবেন।সব কিছুই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নাগাদ মামলা দায়ের হবে।ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পাটির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলামের সাক্ষাতের ছবি ও খবর সম্প্রতি গণমাধ্যমে এলে আলোচনা শুরু হয়।আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করছে।তবে ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আসলামের ওই সফর ছিল ব্যক্তিগত।এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত ১৫ মে ঢাকা থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সেদিন রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বিএনপি নেতা আসলাম সম্প্রতি ভারতে ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন সদস্যের সঙ্গে’ বৈঠক করেন। তিনি ‘সরকার উৎখাতে ইসরায়েলের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে’ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।এর বিরোধিতায় আসলামের আইনজীবীরা সেদিন বলেন, এই বিএনপি নেতা চিকিৎসার প্রয়োজনে পাঁচ দিনের জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এক দাওয়াত অনুষ্ঠানে’ যান। ইসরায়েলের কয়েকজনের সঙ্গে সেখানেই তার দেখা হয়। সেই ছবিই গণমাধ্যমে এসেছে। আসলামের সঙ্গে কোনো বৈঠক তাদের হয়নি। সাত দিনের ওই রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে নাশকতার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আরও ১০ দিন করে হেফাজতের আবেদন করে পুলিশ। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৩০ মে দিন রেখেছে।
চট্টগ্রামের নেতা আসলাম মাস খানেক আগে বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেন খালেদা জিয়া।আর লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস প্রতিষ্ঠানটি চালান।আসলাম বা সাফাদি কেউই ভারতে ওই সাক্ষাতের খবর অস্বীকার করেননি। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টি নেতা, তা তিনি সে সময় ‘জানতেন না।আর সাফাদিও বিবিসির বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাদের মধ্যে কোনও গোপন বিষয়ে’ কথা হয়নি।