বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই পৌরসভা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে বুধবার (২৫ মে) দেশের ৯টি পৌরসভার ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টায়। ভোট শেষে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গণনা। ভোট গণনা শেষে আজই ঘোষণা হবে ফলাফল। এ উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপের এ ভোটে নরসিংদীর ঘোড়াশাল ও রায়পুরা, লক্ষ্মীপুরের সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, নোয়াখালীর সদর ও সেনবাগ, ফেনীর ছাগলনাইয়া, কক্সবাজারের টেকনাফ ও খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।তবে সকাল থেকে বেশ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা কেন্দ্রে এসে ভোট দেয়া শুরু করে। আবার কোথাও কোথাও একেবারেই ছোটখাটো সহিংসতার চিত্র চোখে পড়ে। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল বলা চলে।মেয়র পদের ২৭ প্রার্থীসহ সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদ মিলিয়ে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪১৩ জন। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে এবার মেয়র পদে ভোট হচ্ছে দলীয়ভাবে।সব মিলিয়ে নয় পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় ২১ জন ও স্বতন্ত্র ছয়জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩১৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।নির্বাচনে ১৩৩টি ভোটকেন্দ্রের ৮৯৭টি ভোটকক্ষে মোট তিন লাখ ১৩ হাজার ৬৫১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৫৫ জন ও নারী ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৬ জন।
নির্বাচন কমিশনের সহকারী সচিব রাজীব আহসান জানান, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে। নির্বাচনী এলাকায় এদিন ছিল সাধারণ ছুটি।সকালে ভোট শুরুর দুই ঘণ্টার মাথায় ফেনীর ছাগলনাইয়ায় গোলযোগের খবর পাওয়া যায়। ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, সেখানে জালভোট দেওয়ায় ৭০টি ব্যালট পেপার বাতিল করা হয়।ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ছাগলনাইয়া পৌরসভার মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী মো. আলমগীর।একই কারণ দেখিয়ে নোয়াখালী পৌরসভাতেও বিএনপির মেয়র প্রার্থী হারুনুর রশিদ আজাদ ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রদখল, জাল ভোটসহ অন্যান্য অনিয়ম চললেও নির্বাচন কমিশন এসব ঠেকাতে কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না’। অবশ্য বাকি পৌরসভাগুলোতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আমাদের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন।
মেয়র পদের ২৭ প্রার্থীসহ সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদ মিলিয়ে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ৪১৩ জন। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে এবার মেয়র পদে ভোট হচ্ছে দলীয়ভাবে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এসব নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের ৩৮টি দল ও ১২ প্লাটুন বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়। সেইসঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা দায়িত্ব পালন করেন।
পৌর নির্বাচনের প্রথম পর্বে গত ৩০ ডিসেম্বর ২২৭টি পৌরসভায় ভোট হয়। তাতে আওয়ামী লীগ ১৭৭টি ও বিএনপি ২২টিতে মেয়র পদে জয় পেয়েছে। জাতীয় পার্টির একজন মেয়র হয়েছেন। এছাড়া ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র হন, যার ১৮ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।দ্বিতীয় পর্বে গত ২১ মার্চ ভোটে ১০ পৌরসভার সবকটিতে জয় পান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।এবার ৯ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী ২৭ জন, সদস্য পদে ৪১৩ জন। এর মধ্যে দলীয় ২১ জন ও স্বতন্ত্র ৬ জন। সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে ৩১৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৭০ জন প্রার্থী।মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৩টি, ভোটকক্ষ ৮৭৯টি।রায়পুরা পৌরসভায় পাঁচজন মেয়র ও ৩৮ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ পৌরসভার ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও নির্বাচিত হয়েছেন।ঘোড়াশাল পৌরসভায় মেয়র পদে ২ জন এবং কাউন্সিলর পদে ২১ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর সদরে ২ জন মেয়র ও ৬৭ জন কাউন্সিলর, কসবা পৌরসভায় ২ জন মেয়র ও ৩৫ জন কাউন্সিলর, নোয়াখালী পৌরসভায় ৩ জন মেয়র ও ৪৮ জন কাউন্সিলর, সেনবাগ পৌরসভায় ৪ জন মেয়র ও ৪৬ জন কাউন্সিলর, ছাগলনাইয়া পৌরসভায় ৩ জন মেয়র ও ৪৬ জন কাউন্সিলর, টেকনাফ পৌরসভায় ২ জন মেয়ার ও ৩১জন কাউন্সিলর এবং রামগড় পৌরসভায় ৩ জন মেয়র ও ৫৪ জন কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন।