খালেদা

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা সচলে দেওয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায় অনুসারে মামলাটির প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ।বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।বুধবার এই রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিন আটকে থাকা এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম আবার শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, অপরাধের প্রাথমিক সতত্যা রয়েছে। তাই ওই আবেদন চলে না বলে হাই কোর্ট খালেদার আবেদন খারিজ করে দেয়। ২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেয়েছি। এতে বিচারিক আদালতকে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া নিম্ন আদালত থেকে আগেই ওই মামলায় জামিন পেয়েছিলেন এবং এখনও তা বহাল আছে।তাই হাই কোর্টের রায়ে আত্মসমর্পণের কোনো নির্দেশনা আসেনি। হাই কোর্টের রায়ের অনুলিপি পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১৭ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে রায় দেয়। পাশাপাশি ওই মামলার ওপর এর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশও তুলে নেওয়া হয়।

জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এ মামলা বাতিলের জন্য খালেদার আবেদনে সাত বছর আগে হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় মামলা চলার আইনি বাধা কাটে।এর আগে গ্যাটকো ও নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনও হাই কোর্টে খারিজ হয়ে যায়। ওই দুটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক।চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয় মামলায়।খালেদা মামলাটি বাতিলের আবেদন করলে ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিল বিভাগেও বহাল থাকায় আটকে যায় বিচার।

সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রায় দেয় হাই কোর্ট।বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ ও বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম বৈধ বলে উল্লেখ করে গত বছরের ১৭সেপ্টেম্বর এ রায় দেন হাইকোর্ট।দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রধান আসামি খালেদার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

সাত বছর পর গত বছরের শুরুতে দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিলে হাইকোর্টের দেওয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত বছরের ৩০ আগস্ট আদালত বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর রুল খারিজ করে দিয়ে মামলার কার‌্যক্রমের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, রায়ে বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আমিনুল ইসলামের আদালতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। আগামী ১২ জুন অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

মামলাটির মোট আসামি ১১ জন। খালেদা ছাড়া অন্য দশ আসামি হলেন- সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্র“পের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও এম শামসুল ইসলাম মারা যাওয়ায় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হওয়ায় তারা আসামি তালিকা থেকে বাদ গেছেন। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

এরপর মামলাটি বাতিল চেয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এরপর বেশ কয়েক দফায় স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়।বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ছাড়াও নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে পৃথক পৃথক রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এসব রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত ও রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। কয়েক বছর ধরে স্থগিত থাকার পর মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায় দুদক। পরে পৃথক পৃথক শুনানি শেষে যথাক্রমে গত বছরের ১৮ জুন ও ৫ আগস্ট ওই মামলা দু’টিও সচলের রায় দেন হাইকোর্ট। সেগুলোরও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর উচ্চ আদালতের আদেশে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন আদালত।