23-05-16-Nurjahan Begum Death-2

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে নারীদের প্রথম সাপ্তাহিক বেগম’র সম্পাদক নূরজাহান বেগম আর নেই।ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ১০টার দিকে মৃত্যু হয়েছে তার। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি দুই মেয়ে রেখে গেছেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়ে গত কিছুদিন ধরে এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) ছিলেন নূরজাহান বেগম।তার বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উনি সোমবার সকালে ইন্তেকাল করেছেন। সকাল সাড়ে ৮টায় একটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। ডাক্তাররা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে দ্বিতীয়বার উনার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।

উপমহাদেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজার জন্য তার মরদেহ গুলশান জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। সেথানে বাদ মাগরিব জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সোমবার (২৩ মে) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে ৫টা পর্যন্ত স্বজন-শুভানুধ্যায়ী-সহকর্মীরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পান। এরপর নেওয়া হয় গুলশান মসজিদে।নূরজাহান বেগমের প্রথম নামাজে জানাজা তার পুরান ঢাকার বাসভবন ‘খাতুন কুটির’র আঙিনায় সম্পন্ন হয়। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে এ জানাজা হয়েছে। এতে অংশ নেন মরহুমার স্বজন, শুভানুধ্যায়ী ও প্রতিবেশীরা। এর আগে, রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নূরজাহান বেগমের মরদেহ খাতুন কুটিরে নিয়ে আসা হয়।

উপমহাদেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমকে সর্বস্তরের জনতার শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয় বিকেলে।স্বজন-শুভানুধ্যায়ী-সহকর্মীরা শহীদ মিনারে তার মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ।ফুসফুসে কফ জমে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ৫ মে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নূরজাহান বেগমকে। অবস্থার অবনতি হলে ৭ মে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে সেখানে ‘লাইফ সাপোর্টে’ ছিলেন নারী সাংবাদিকতার এই পথিকৃৎ।সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন নূরজাহান বেগম। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৯১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ফ্লোরা ইয়াসমিন ও রিনা ইয়াসমিনকে রেখে গেছেন। তার স্বামী ছিলেন রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই।

ফুসফুসে কফ জমে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ৫ মে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নূরজাহান বেগমকে। অবস্থার অবনতি হলে ৭ েেম তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে সেখানে ‘লাইফ সাপোর্টে’ ছিলেন নারী সাংবাদিকতার এই পথিকৃৎ।শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে গত ৪ মে নূরজাহান বেগমকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর সময় বড় মেয়ের সঙ্গে ছোট মেয়ে রীনা ইয়াসমিন বীথিসহ পরিবারের সদস্যরা তার পাশেই ছিলেন।বাংলাদেশে নারী সম্পাদকদের পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন।

নূরজাহান বেগম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর তার খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন।দুপুরে মরদেহ প্রয়াতের নারিন্দার বাড়ি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন স্মৃতি ভবনে নেওয়া হয়।সেখানে জানাজায় সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও অংশ নেন।এরপর কফিন নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বসাধারণ ফুল দিয়ে বাংলার নারী জাগরণের অন্যতম পুরোধা এই ব্যক্তিত্বের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়। নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুরের চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ভাগলপুরে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নেন তিনি।

সাহিত্য চর্চায় মেয়েদের জায়গা করে দিতে তার বাবা সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন ১৯৪৭ সালে ‘বেগম’ পত্রিকা চালু করেন। প্রথমে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হলেও দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে পত্রিকাটি ঢাকায় চলে আসে।প্রতিষ্ঠার প্রথম চার মাস পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। এর পর সম্পাদনার দায়িত্বে আসেন নূরজাহান বেগম।বাংলাদেশের নারী সাহিত্যিকদের অনেকের লেখার হাতেখড়ি বেগম পত্রিকার মাধ্যমে। নারীদের লেখালেখিতে উৎসাহিত করা নূরজাহান বেগম এক সাক্ষাৎকারে বলে গেছেন- বেগমের বাইরে আমি কোনো দিনই কোনো কিছু করার চেষ্টা করিনি। বেগমই তো আমার সারা জীবনের কাজ। নারী শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে রোকেয়া পদকে ভূষিত হন নূরজাহান বেগম। এছাড়া বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট, রোটারি ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন তাকে সম্মাননা জানিয়েছে।১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের (দাদা ভাই) সঙ্গে বিয়ে হয় নূরজাহান বেগমের। ১৯৯৯ সালে তার স্বামীর মৃত্যু হয়।