যশোরে সুষ্ঠ বিনোদনের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত কালেক্টরেট পার্কটির এখন বেহাল দশা। বিনোদন পিপাসু মানুষের আনন্দ দানের জন্য পার্কটি নির্মাণ করা হলেও তা দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে শতভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সৌন্দর্য হারিয়ে পার্কটি এখন নিজেই শ্রীহীন। বন্ধ হয়ে গেছে ঝর্ণার পানি, শুর হারিয়েছে হাতি, খরগোশের বুক ফুটো হয়ে গেছে।সুত্রমতে, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে যশোর ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থিত পাম গাছে ঘেরা কালেক্টরেট পার্কটি উদ্বোধন করা হয়। এর আগে এটি নেওয়াজ পার্ক হিসাবে পরিচিত ছিল। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় যশোর পৌরসভা উদ্যোগে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই পার্কটি সংস্কার করা হয়।তবে মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে পার্কটির অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। এত দিন বিনোদন পিপাসু মানুষের মনের খোরাক হিসাবে পাকর্টি ব্যবহৃত হয়ে আসলেও এখন আর দৃষ্টি নন্দনতা নেই।
সরেজমিনে পার্কটি ঘুরে দেখা যায়, পার্কটির প্রবেশ মুখেই সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নির্মিত কৃত্রিম হাতির শুর উচু করে দাড়িয়ে থাকলেও দু’ পাশের চোয়ালের দাঁতগুলো খোয়া গেছে। একটু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রয়েল বেঙ্গল টাইগারটির লেজ বিহীন হুকার দিচ্ছে।তার বাঁ পাশে থাকা দুটি হরিণের শিং ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। দু’পায়ে ভর করে থাকার অবস্থা হারিয়ে ফেলেছে একটি বক। কান সোজা করে বসে থাকা খরগোশটির বুকে গর্ত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত পার্কটির ভেতরে রাস্তার মধ্যে উপড়ে পড়ে আছে বিশাল বড় গাছ। কিন্তু গাছটি সরাতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পার্কের মধ্যে শিকারী বেশে বসে থাকা মাছরাঙাটির চোখ ঝাঁপসা হয়ে গেছে। পায়ের গোড়ালী ফেটে যাওয়ায় দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে একমাত্র নির্মিত জাতীয় পাখি দোয়েল। পার্কটির পশ্চিম পাশে নির্মিত পাথরে ঘেরা পানির ফোয়ারাটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।এ সময় পার্কে বিনোদনের জন্য আসা শহরের আশ্রম রোড় এলাকার কামাল মুস্তাফা বলেন, জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ঘেষে অবস্থিত হওয়ায় কালেক্টরেট পাকর্টিতে বিনোদন পিপাসু মানুষ আড্ডা জমায়। নিরাপত্তা হচ্ছে মুখ্য। এখানে কোন মাস্তান কিংবা বকাটের উপদ্রব না থাকায় সবাই জায়গাটিকে নিরাপদ মনে করে। কিন্তু পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নির্মিত স্থাপত্যগুলো ভেঙ্গে সে আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।’ কর্তৃপক্ষ এটার তদারকি না করায় তাড়াতাড়ি সৌন্দর্যের আলামত নষ্ট হয়ে গেছে মন্তব্য করেন তিনি।যশোরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘যশোরবাসীর সুষ্ঠ বিনোদনের জন্য পার্কটি পুনরায় সংস্কার করা প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, নিয়াজ মোহাম্মদ খান ছিলেন যশোরের ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯৩৯ সালে তিনি যশোরে ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব নেন। তার কার্যকাল ছিল ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪২ সাল। তিনি ছিলেন বৃক্ষপ্রেমিক। অফিস শেষে একটা সময় দিতেন গাছ লাগানো ও পরিচর্যার কাজে। নিয়াজ মোহাম্মদ খান গোটা জেলায় শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ ভুমিকার রাখেন। তার নামেই হয় নিয়াজ পার্কটির নাম। কালেক্টরেট ভবনের উত্তর পাশের ফাঁকা জায়গায় নিয়াজ মোহাম্মদ খান ফুল গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করেছিলেন। তৈরি করেছিলেন সিমেন্টের চেয়ার। প্রবীনদের মুখে শোনা যায় নিয়াজ পার্কটি তখন হয়ে ওঠে নয়নাভিরাম।