আরো কাছে ‘রোয়ানু’, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ভারতের অন্দ্র প্রদেশের উপকূল থেকে কিছুটা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে এসে সাগরের পশ্চিমমধ্য ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। গত ২৪ ঘন্টায় ‘রোয়ানু’ এগিয়েছে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার। এর প্রভাবে সকাল থেকেই বন্দরনগরীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

সারাদিনই কখনও ভারী বা কখনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা কেন্দ্রের বিশেষ বুলেটিনে দেশের সকল সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার বুলেটিনে ৪ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ৩৪ দশমিক ৪ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। শুক্রবার সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে নগরীর বাসিন্দাদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে।  কেউ কেউ ছাতা নিয়ে বাইরে বের হতে দেখা গেলেও টিপটিপ বৃষ্টিতে জনজীবনে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কমেছে তাপমাত্রা, এতে শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, স্বর্দি, জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হাসানুর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাছ থেকে কিছুটা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে এসে সাগরের পশ্চিমমধ্য ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তবে এর গতি অনেকটাই কম। বর্তমান গতি অব্যহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আসতে আরো দু’দিন লাগবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।’ তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৬৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৩৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৮৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২১৫ কিলো দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এর আগে সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৯৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৪৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সকল সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সবরকমের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি সকল উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। জেলা কন্ট্রোলরুমের নম্বর হচ্ছে ৬১১৫৪৫।