দেশের জনসংখ্যা সঙ্কট নয়, সম্পদ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেছেন, আমাদের মানুষই হচ্ছে আমাদের মূল সম্পদ। এই সম্পদকে জনসম্পদে রূপান্তর করবো।বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর ২১তম জাতীয় সম্মেলন ও ৩৯তম কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু আমি মনে করি, এ বিশাল জনগোষ্ঠী আমাদের সম্পদ, যা পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই নেই। এ সম্পদকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে কাজ করছে সরকার। শিক্ষিত ও দক্ষ- যোগ্য করে তুলে এদেশের মানুষকে জনসম্পদে পরিণত করবো।অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের দিকে নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের এক সম্মেলনে তিনি বলেন,যখনই কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়, প্রকল্পটা কী পরিমাণ প্রয়োজনীয় ওটাই যেন বিবেচ্য হয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প করার সময় একটা অনুরোধ করব যে, কোথায় কোন প্রকল্পটা সত্যিকারভাবে প্রয়োজন সেটাই করবেন। আর কতটুকু প্রয়োজন ওইটাও কিন্তু একটু মাথায় রাখবেন।অহেতুক অর্থ নষ্ট করার যৌক্তিকতা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, অকাজে অহেতুক অর্থ যেন অপব্যহার না হয় সে বিষয়টাও মনে রাখতে হবে।
প্রকল্প গ্রহণে কোন বিষয়টা মাথায় রাখা হচ্ছে তা নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায়ও প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।একনেক মিটিংয়ে একটা প্রশ্ন করেছিলাম যে, আমরা যখন প্রকল্প নেই তখন আমরা কোন চিন্তাটা মাথায় রাখি? দেশের সার্বিক উন্নয়ন? না প্রকল্প তৈরির মধ্য দিয়ে কিছু কমিশন খাওয়া? না কিছু অর্থ পাওয়া? কোনটা গুরুত্ব পায়?উদাহরণ হিসেবে নিজের এলাকা গোপালগঞ্জের পাচুরিয়া খালের পাশে প্রয়োজন না থাকলেও উঁচু বাঁধ দেওয়া এবং স্লুইস গেইট তৈরির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলো দ্রুত শেষ করার তাগাদা দেন তিনি। দেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিপুল জনশক্তিকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করাই তার সরকারের লক্ষ্য।জনসংখ্যাকে সংকট বলে মনে করি না। এটা সম্পদ।
জনশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে তার সরকারের সময় নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।তিনি জানান, সারাদেশে এক হাজার ৮০০টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে তিনটি মহিলা পলিটেকনিকসহ ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বেসরকারি পর্যায়ে চারশ’রও বেশি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট করা হয়েছে।সরকারি ৫১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় শিফট চালুর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০১৯সালের মধ্যে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অতিরিক্ত এক লাখ শিক্ষার্থীকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স কোর্সে ভর্তি করার লক্ষ্যে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।কারিগরি শিক্ষা প্রসারে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উপযুক্ত ট্রেনিং ও শিক্ষা দিয়ে বিদেশে পাঠাতে চাই। শেখ হাসিনা বক্তব্যে তার সরকারের সময় বিভিন্ন খাতে উন্নয়নসহ সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর কথাও উল্লেখ করেন।
অন্যান্য কারিগরি পেশাজীবীদের মতো চাকরিতে নিয়োগের সময় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদেরও একটি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট এবং প্ল্যানিং ডিজাইনে কর্মরতদের জন্য স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।আমি আশা করছি অর্থ মন্ত্রণালয় খুব তাড়াতাড়িই এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে।২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সব দিক থেকেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।মানুষকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষারে প্রসার ও এর উন্নয়ন করার নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, আগে আমরা বলতাম, দু’টি সন্তানই যথেষ্ট, একটি হলো ভালো হয়। কারো যদি ৫টি সন্তান হয় বাবা-মা কী ফেলে দিতে পারে? মানুষগুলোকে জনসম্পদে পরিণত করবো এটাই লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,অন্য দেশগুলো আমাদের মতো এতো তরুণ মানুষের সম্পদের অধিকারী নয়। সেসব বৃদ্ধদের দেশ হয়ে গেছে। আর আমরা সেসব দেশের উন্নয়নে আমরা লোক দেই। আমাদের দেশ এমন সঙ্কটে পড়ুক তা আমরা চাই না।কারিগরি শিক্ষা ও এর উন্নয়নে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা নীতিমালায় কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়ে এসেছি এবং এ সময় থেকেই কারিগরি শিক্ষা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মেয়েদের জন্য ২৫টি পলিটেকনিট ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকায় একটি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি টেকনিক্যাল কলেজে ডিপ্লোমা ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বেসরকারি ৪ শতাধিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বেতন-বৈষম্য দূরীকরণের জন্য পলিটেকনিক শিক্ষকদের স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। শিক্ষক সঙ্কটের সমাধান করা হয়েছে। লেকচারার-প্রফেসর পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।অনুষ্ঠানে তিনজনকে এ বছরের আইডিইবি কৃতী পদক দেন প্রধানমন্ত্রী।