মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জ জেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যে কোন দিন রায় রায় ঘোষণা করা হবে৷মামলায় উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বুধবার আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেত্বেত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল মামলার যে কোন দিন রায় ঘোষণা করতে পারেন৷ বিচারিক প্যানেলের বাকি দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী৷
গতবছর ৩০ এপ্রিল একই মামলার আসামি দুই ভাই বড় মিয়া ও আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে তদনত্ম প্রতিবেদন দাখিল করে প্রসিকিউশন৷ সে সময় এ মামলার তদনত্মকালে আব্দুর রাজ্জাকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন পেশ করা হয়৷এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে গতবছর ২৯ এপ্রিল তদনত্ম প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদনত্ম সংস্থা৷ আসামিদের বিরম্নদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, অগি্নসংযোগসহ ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রকাশ করা হয়৷ গতবছর ৩১ মে এ তিনজনের বিরম্নদ্ধে চার অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইবু্যনাল৷
গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি মাহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করে ট্রাইবু্যনাল৷ এর আগে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি দুই সহোদরকে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইবু্যনালের নির্দেশে ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয়৷
২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরম্নদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন৷ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কাযর্ দিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে তদনত্ম প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন৷ পরে মামলাটি আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে পাঠানো হয়৷ ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ট্রাইবু্যনালের তদনত্ম সংস্থা হবিগঞ্জে সরেজমিন তদনত্মে আসেন৷ তদনত্মে ২১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়৷
তদনত্ম প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামি বড় মিয়া ও আঙ্গুর মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের এলাকায় রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন৷ তাদের মধ্যে বড় ভাই ছিলেন শানত্মি কমিটির চেয়ারম্যান ও ছোট ভাই ছিলেন রাজাকার কমান্ডার৷ তাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক৷ আসামিরা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিসত্মানি বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন৷তাদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকালে ৭১ এর ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে আসামিরা৷
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি মরহুম মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে পাকিসত্মানি বাহিনীর সহযোগিতায় হামলা চালিয়ে অগি্নসংযোগ ও লুটপাট করে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় এবং ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়৷
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একই দিন বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় তাদের সহযোগিতায় পাকিসত্মানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আলস্নাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে৷ ওই বোন বিষপানে করে আত্মহত্যা করে৷চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালে আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায় আসামিরা৷ ওই নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যান আনছার আলী৷প্রসিকিউশন দাবী করেছে আসামীদের বিরম্নদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ তারা সাক্ষ্য-তথ্যের আলোকে প্রমাণ করতে পেরেছেন৷ আসামীদের দৃষ্টানত্মমূলক সাজা প্রত্যাশা করেছে প্রসিকিউশন৷