বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র৷ এটা একার বিষয় নয়, এর বিচার জনতার আদালতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন৷ মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর পর হলেও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে৷ তাই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জাতি কৃতজ্ঞ৷তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক অর্জন হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না৷মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেননি৷ তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, যুদ্ধকালে হত্যা, নারীধর্ষণ, অগি্নসংযোগ লুন্ঠন, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের ক্ষমা নেই৷বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের হাতে যে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ তা মুক্ত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ৷
তোফায়েল বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টা সময়ের ব্যাপার৷ অপেক্ষা করেন এবং দেখেন৷২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হলে যুদ্ধাপরাধী দল’ হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে৷এরই মধ্যে শর্ত পূরণ না করায় হাই কোর্টের আদেশে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়৷ ফলে বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে দলটি৷ ওই আদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল বিভাগে গেলেও সেই শুনানি এখনো শুরু হয়নি৷
একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতারা কখনোই ক্ষমা চাননি, বরং তারা বলে এসেছেন, তাদের সেই অবস্থান সঠিক ছিল৷ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যনালের বিভিন্ন মামলার বিচারেও মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে এসেছে৷মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতকে একটি ক্রিমিনাল সংগঠন বলা হয়৷ এরপর বিভিন্ন মহল থেকে দল হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি জোরালো হয়ে উঠলে প্রসিকিউশন তদন্তও শুরু করে৷ কিন্তু ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনের বিচারে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো না থাকায় বিষয়টি এখনো আটকে আছে৷
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সমপ্রতি সাংবাদিকদের জানান, আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে; শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে৷ আর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বছরই মধ্যেই বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে৷দল হিসাবে জামায়াতের বিচারে প্রস্তাবিত আইন মন্ত্রিসভায় কেন দুই বছর ধরে ঝুলে আছে- বুধবার তোফায়েল আহমেদের কাছে তা জানতে চান সাংবাদিকরা৷আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল এর জবাবেও বলেন, অপেক্ষা করেন, ৪৫ বছরে বিচারের কাজ করেছি৷
আইনটি নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো প্রশ্ন আছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, আইন হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন আসে নাই৷ এই দেশের জনগণের আদালতে জামায়াতের বিচার হচ্ছে৷
জামায়াত সম্পর্কে আজ মানুষের কী ধারণা? জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দিলেন, তাহলে কি সব শেষ হয়ে গেল? এটার একটা প্রক্রিয়া আছে৷ জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারটা সময়ের ব্যাপার৷জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম বাড়বে বলে একটি মহলের শঙ্কার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, জামায়াততো ইতোমধ্যে বিভিন্ন নামে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷ যতগুলো জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় দেখা যায়, এগুলোর মূলে রয়েছে জামায়াত৷ বিএনপির লোকও আছে এর মধ্যে৷
নিজামীর ফাঁসির প্রসঙ্গ টেনে তোফায়েল বলেন, শেখ হাসিনা প্রধামমন্ত্রী হওয়ায় এই কঠিন কাজটা করা সম্ভব হয়েছে৷ আল-বদর বাহিনীর প্রধান এই দেশে মন্ত্রী হয়েছিলেন, এটা কি এই দেশের কেউ ভাবতে পেরেছে! বিচার চলছে, আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে চলেছি৷বঙ্গবন্ধু নিজেই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেছিলেন বলে যে যুক্তি যুদ্ধাপরাধের বিরোধিতাকারীরা দেয়, তা নাকচ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা৷তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন নাই৷ আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলাম৷ যে আদেশটা গিয়েছিল, তখন মালেক উকিল সাহেব ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ক্লেমেন্সি উইল বি গিভেন টু দোজ, হু আর নট ইনভলভড ইন কিলিং, লুটিং, আরসেনিং অ্যান্ড রেইপ৷ তাদের বিচারের জন্যই ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল গঠনের বিধান সংবিধানে রাখা হয়েছে৷
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঘাতক দালালদের বিচারে আইন প্রণয়ন করে আদালত গঠন করা হলেও সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই উদ্যোগ থেমে যায়৷ ১৯৭৫ সালের শেষ দিন জেনারেল জিয়াউর রহমান এক সামরিক অধ্যাদেশে দালাল আইন বাতিল করলে, মুক্তি পেয়ে যায় কারাবন্দি যুদ্ধাপরাধীরা৷ সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তোফায়েল বলেন, জিয়ার আমলে ৩১ ডিসেম্বর ঘুমিয়ে ১ জানুয়ারি ঘুম থেকে উঠে দেখি জেলখানা খালি৷ ওই জেলের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধী ছিল, জিয়া তাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন৷দুটো বড় কাজ শেখ হাসিনা করে গেলেন, তিনি ইতিহাসের পাতায় অক্ষয় হয়ে থাকবেন৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৷ কেউ ভাবেনি, কিন্তু তিনি তার ডিটারমিনেশনের মধ্য দিয়ে, নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে তিনি এটা করেছেন৷