ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর জন্য গায়েবানা জানাজা পড়তে গিয়ে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা৷বুধবার বেলা পৌনে ২টার দিকে চট্টগ্রাম কলেজের পশ্চিম ফটক এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়৷ পরে আধা ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ৷জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব ফটকের পাশের চন্দনপুরা সড়কে জোহোরের নামাজ ও নিজামীর গায়েবানা জানাজার জন্য জড়ো হয়৷এ সময় পশ্চিম গেইটে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর জানাজা প্রতিহত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্রলীগের কর্মীরা৷
উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় কলেজের পশ্চিম ও পূর্ব ফটক বন্ধ করে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়৷গায়োবানা জানাজা শেষে শিবিরের কিছু নেতাকর্মী কলেজ সংলগ্ন প্যারেড মাঠে ঢুকে পশ্চিম ফটকে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে৷ ওই ফটক ভেঙে তারা কলেজ চত্বরে চারটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে, যার তিনটি শিক্ষকদের এবং একটি পুলিশের৷
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কিছুটা পিছু হটে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ৷ পরে সংগঠিত হয়ে শিবির কর্মীদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ৷ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে শিবির কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে প্যারেড মাঠে অবস্থান নেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগরের আমির আ ন ম শামসুল ইসলামের ইমামতিতে দ্বিতীয় দফা গায়েবানা জানাজা পড়েন দলের নেতাকর্মীরা৷ পরে সেখান থেকে তারা চলে যান৷একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃতু্যদণ্ড কার্যকর হয়েছে মঙ্গলবার রাতে৷ এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবারের হরতালের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি বুধবার তার জন্য গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর৷
এদিকে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আমির মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম৷
বুধবার নগরীর চকবাজার প্যারেড মাঠে নিজামীর গায়েবানা জানাজার আগে সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন৷ তার অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই নিজামীকে মিথ্যা অভিযোগে সরকার হত্যা করেছে৷তিনি বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করারও আহ্বান জানান৷
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ জাফর সাদেক, উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সম্পাদক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা আমির অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন, চট্টগ্রাম মহানগরী সহকারী সম্পাদক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন ও অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, নগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ, নগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, নগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, নগর দক্ষিণ ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ শোয়াইব প্রমুখ৷জানাজাকে ঘিরে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়৷ এসময় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম কলেজ হোস্টেলের গেট, শিক্ষক ও পুলিশের মোটরসাইকেল, রাস্তায় চলাচলরত বিপুলসংখ্যক কার, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা ভাঙচুর করে৷ বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে৷ ফাঁকা গুলি ছোড়ে৷ পরে পুলিশ শর্টগানের সাত-আট রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷ এসময় মূল গেট দিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে শিবিরের নেতা-কর্মীদের প্যারেড মাঠে নিয়ে আসে৷ পরে তারা উত্তর গেট দিয়ে চকবাজারের দিকে চলে যায়৷