তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাঁধাইড় ইউপির জুমারপাড়ার আমবাগানে পীর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহরকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ও এনিয়ে থানায় মামলা হওয়ার তিনদিন অতিবাহিত হলেও গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি। সেইসাথে এই হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু না পেলেও পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, নিহত পীর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর ফরিদপুরের গোয়ালন্দঘাটের পীর নূর মোহাম্মদ ওরফে নুরু ফকিরের অনুসারী ছিলেন। তবে বর্তমানে নিজেকেই পীর বলে দাবি করে বেশকিছু মুরিদান তৈরী করেছিলেন। কিন্তু নিজে নামাজ আদায় করতেন না। আর এ কারণেই ধর্মানুভূতিই কাল হয়েছে পীর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর। সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী মুকুল হত্যাসহ যেসব হত্যাকন্ডগুলো ঘটেছে তার সঙ্গে শহীদুল্লাহর হত্যাকান্ডটিরও যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে বলেও পুলিশ দাবি করেছে।
এদিকে গত শনিবার রাতে পীর শহীদুল্লাহর ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রাম পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার মহানন্দখালীতে দাফন করা হয়েছে। রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) নিশারুল আরিফ এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. এনামুল হক উভয়েই সাংবাদিকদের জানান, রাবি শিক্ষক হত্যাকান্ডের সাথে তানোরের পীর শহিদুল্লাহর হত্যাকান্ডের যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। উভয়ের পেছন দিক থেকে ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে একটিমাত্র আঘাতে অধ্যাপক রেজাউল করিমের ধড় থেকে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন হলেও পীর শহিদুল্লাহর ক্ষেত্রে তা হয়নি। ফলে ঘাতকরা পীর শহিদুল্লাহরকে প্রথমবার আঘাতের পর গলাকেটে হত্যা করে।
এনিয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই হত্যাকান্ড কী কারণে ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু না পেলেও সন্দেহভাজনদের আটকের জন্য অভিযানও চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেইসাথে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এ হত্যা রহস্য ও জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে রোববার জেলা পুলিশ সুপার নিশারুল আরিফ তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, নিহত পীরকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে ডেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় সোয়া ঘণ্টা পরেই শহীদুল্লাহর ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। সেই হিসেবে বেলা ১১টার মধ্যেই তাঁকে হত্যা করা হয় হয়েছে বলেই পুলিশ ধারণা করছে।
পুলিশ সুপার বলেন, ধারণা করা হচ্ছে যারা শহীদুল্লাহকে মোটরসাইকেল করে তুলে নিয়ে গেছে, তারাই এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। সাম্প্রতিককালে যেসব হত্যাকান্ড ঘটছে তার সঙ্গে এই হত্যা প্রক্রিয়ার মিল রয়েছে। কোপ দেওয়ার ধরণও একই রকম। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে উগ্রপন্থী কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী এই হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। আবার অন্যরাও করতে পারে। মামলার এজাহারে বাদী নিহত শহীদল্লাহর ছেলে রাসেল জমিজমা নিয়ে বিরোধের একটি পুরোনো বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার জানান, শহীদুল্লাহ বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তার ফোনে একই নম্বর থেকে চারটি কল আসে। যে নম্বর থেকে শহীদুল্লাহর ফোনে কল এসেছিল সেটিও এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ ঘটনার পর নিহত শহীদুল্লাহর মোবাইল সেটটিও পাইনি। তবে ফোনের কললিষ্ট থেকে এ তথ্যগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার নিশারুল আরিফ আরও বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে মোটরসাইকেল আরোহীদের চেহারার বর্ণনা মিলেছে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে জেলার তানোর উপজেলার কৃষ্ণপুর নামক স্থানে গিয়ে নিহত শহীদুল্লাহর ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। আর সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মুন্ডুমালা-আমনুরা সড়কের উত্তর পার্শ্বের তানোর উপজেলার জুমারপাড়া আমবাগানে তাঁর লাশ পাওয়া যায় সন্ধ্যায়। যেহেতু এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে দেশের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অন্য হত্যাকান্ডগুলোর অনেকক্ষেত্রে মিল আছে। এ কারণে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে তারা বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত; নিহত পীর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর ও রহনপুর এলাকার তার কিছু ভক্ত তৈরি করেছিলেন। তাদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করতেন তিনি। আর সেলক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার তিনি পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার মহানন্দখালীর নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর গোলাবাড়ী গ্রামে অজ্ঞাত এক মুরিদের উদ্দ্যেশে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার (৬ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার তানোর উপজেলার বাঁধাইড় ইউনিয়নের জুমারপাড়ায় আবুল হাসানের আমবাগান থেকে তার গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
এদিকে ওই ঘটনার পর থেকে নিহত শহীদুল্লাহর পরিবারের লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।#