ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশি দম্পতি হত্যাকা-ে তাদের বড় ছেলের স্বীকারোক্তি মিলেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ। সান হোসে পুলিশের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদপত্রগুলো জানায়, বড় ছেলে হাসিব বিন গোলাম রাবি্ব (২২) তার বাবাকে কয়েক দফা গুলি চালিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন। স্বীকারোক্তিতে হাসিব মা’কে হত্যায় জড়িত ছিলেন না এবং হত্যাকা-ে তার ছোট ভাই ওমর (১৭) জড়িত নয় বলেও দাবি করেছেন।
শুক্রবার সান হোসের পুলিশ সার্জেন্ট পেট্রিক গুয়ের নিহত দম্পতির দুই ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে ‘হত্যার অভিযোগ’ ও দুই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দাখিল করেছে। বাবা গোলাম রাব্বী (৫৯) ও মা শামীমা রাব্বীকে (৫৭) হত্যার দায়ে এর আগে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে তাদের জামিন-অযোগ্য আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে হাসিব বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে গুয়ের জানান। অভিযোগপত্রে ওমরকেও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অজ্ঞাত এক ব্যক্তির নির্দেশে হাসিব তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন; এর আগে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে (হাসিব) আঘাত করে বলেও সে দাবি করেছে। অন্যদিকে ওমর তার বড় ভাইকে বাবা-মা হত্যার জন্য দায়ী করলেও ‘অজ্ঞাত কোনো ব্যক্তি’র উপস্থিতির কথা জানায়নি বলেও গুয়েরের ভাষ্য।
‘সে (ওমর) তদন্তকারীদের বলেছে, হাসিবই বাবা-মা’কে খুন করে তাকে গ্যারেজ পরীক্ষা করে দেখতে বলে, যেন তারা ওকল্যান্ডের এনিম কনভেনশনে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত লাশের রক্ত চুইয়ে বাইরে না যায়। এই গ্যারেজেই হাসিব তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে।’ গুয়ের বলেন, বাবা গোলাম রাব্বীকে হত্যার পর হাসিব ওমরকে মৃতদেহ পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে বলে; এরপরই সে (হাসিব) তার মাকে হত্যা করে। তবে কী কারণে এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে গুয়ের। এর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসিব তার ছোট ভাইকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে পুরো ঘটনা ‘খুলে বলা’র আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সে বলেছিল, ‘আমি পুরো ঘটনা সবাইকে জানাতে চাই, তবে আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়া তা বলব না।’ তাৎক্ষণিকভাবে দুই ভাইয়ের পক্ষে থাকা আইনজীবীর নাম জানাতে পারেনি এবিসি নিউজ। সান্তা ক্লারা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্টের এটর্নি অফিসের মুখপাত্র শন উইবি জানান, অভিযুক্ত দুই ভাই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
কয়েকদিন ধরে গোলাম রাবি্বর কোনো খোঁজ না পেয়ে গত রোববার বিকালে তার কয়েকজন বন্ধু সান হোসের বাড়িতে যান।
সেখানে গিয়ে তারা বাড়ির দরজা খোলা পান এবং লন্ড্রি রুমে কাঠের মেঝের ওপর দুজনের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। সেখানে একটি চিরকুট পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল- ‘দুঃখিত, আমার প্রথম খুনটি ছিল বিরক্তিকর’। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তারা ওই বাড়ির দেয়ালে লেখা আরেকটি বার্তা দেখতে পান। সেখানে লেখা ছিল- ‘তোমার মতো আমি মিথ্যাবাদী হতে পারব না। আমি ওদের (মা-বাবা) অজ্ঞাতে অথবা সম্মতি ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারব না।’
রাবি্ব দম্পতির লাশ যখন পাওয়া যায়, তখন থেকেই তাদের দুই ছেলে নিখোঁজ ছিলেন। দুই দিন পর ২৬ এপ্রিল প্রথমে ছোট ছেলের সন্ধান পায় পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বড় ছেলে হাসিবকে বুধবার সন্ধ্যায় ট্র্যাসি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সান্তা ক্লারা সিটির মুসলিম কম্যুনিটি অ্যাসোসিয়েশনে শুক্রবার নিহত দম্পতির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, এতে শতাধিক মানুষ অংশ নেন বলে সান হোসে মারকিউরি নিউজ জানিয়েছে।