lawenforcements-bgd-thenewscompanyরাজধানীর কলাবাগানে ডবল মার্ডারের ঘটনায় জড়িতদের ৫ দিনেও পুলিশ ও গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করতে পারেনি। চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সরকারের ৫টি সংস্থা একযোগে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। এ ঘটনার পর ১২-১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কেউ স্বীকার করেননি। তবে গুজব রয়েছে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ২ জনকে এবং স্থানীয় অপর এক ব্যক্তি রয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত জুলহাজ মান্নানের মা সখিনা খাতুনকে গোয়েন্দা পুলিশ এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এবং দারোয়ান পারভেজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর দুই জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের মূল টার্গেট ৫ জন। এই পাঁচজন কিলিং মিশনে অংশ নেয়। এদের মধ্যে একজন সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই পাঁচজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য কাজ চলছে। এদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা বা পুলিশ হেফাজতে আনা হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ডিবি, এসবি, সিআইডি, র‌্যাব ও ডিজিএফআই একযোগে খুনিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। তদন্ত সংস্থা ডিবি ছাড়া অন্য সংস্থাগুলোকেও তদন্ত ও খুনিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবাই পৃথকভাবে কাজ করলেও ডিবির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সময়ে সময়ে আলোচনা হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলা টিমকে সন্দেহের প্রধান তালিকায় রেখে বিভিন্নভাবে তদন্ত চলছে। এই সংগঠনের যেসব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে অবস্থান করছে, তাদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদকালে সিসিটিভির ফুটেজ দেখানো হবে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গোয়েন্দারা যাদের চিহ্নিত করেছে তাদের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এদের অবস্থান শনাক্ত করা এবং গ্রেপ্তারের জন্য ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও এনালগ পদ্ধতি’- উভয় ভাবেই চেষ্টা চলছে। ঘটনার পর জব্দ করা ব্যাগ ও মোবাইল ফোন থেকে খুনিদের শনাক্ত করার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যেসব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এসব আলামত থেকেও এখনই খুনিদের শনাক্ত করার মতো কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম ও উত্তর বঙ্গে ডিবির টিম গেছে। কারণ এই দুই অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা বেশি। উত্তরাঞ্চলে জেএমবির এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বেশি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুনিরা ঘটনার পর রাজধানীর বাইরে চলে গেছে। তারা উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারে। এই দুই এলাকায় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সিসিটিভির ফুটেজ থেকে ছবি সংগ্রহ করে তা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি টিম এসব এলাকায় তৎপর রয়েছে। তারা আরো জানান, এই ঘটনার সঙ্গে বাইরের কোনো অপশক্তির ইন্ধন আছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। এ কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত কাজ চলছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২-১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরো লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদের মধ্যে খুনিদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত বাসার নিরাপত্তা কর্মী পারভেজ ও সুমনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। স্থানীয় নিহত জুলহাজের মা সখিনা খাতুনকে এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তিনি জুলহাজের মৃত্যুর খবর এখনো জানেন না। তাকে তার বড় ছেলের বাসায় নিয়ে রাখা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা এখনো তার সঙ্গে গোয়েন্দাদের কথা বলতে দিতে চাচ্ছেন না। তার সঙ্গে কবে নাগাদ কথা বলা সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না। ওই বাসার কাজের মেয়ের সঙ্গে এখনো কথা বলা সম্ভব হয়নি।