Babul---5

দেশে গড়ে প্রতিদিন ১৪ জন খুন হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর এ ঘটনাকে সরকারের লোকজন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা নিয়ে রিমান্ডে নিয়ে দেশের সম্মানিত নাগরিকদের অসম্মান করা হচ্ছে।সরকারকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে যে সংকট সৃষ্টি করেছেন তা দেশের মধ্যেই নিরসন করুন।শনিবার জাতীয় কাকরাইল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।খালেদা জিয়া বলেন, বিচার বহির্ভূত ভাবে যাকে-তাকে খুন ও ঘুম করা হচ্ছে। যেখানে সেখানে মানুষের মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে, এর মধ্যে অনেকের ঘুমের পর মরদেহও পাওয়া যাচ্ছে না। কেন দেশে এভাবে মানুষ খুন, ঘুম হচ্ছেন। দেশের মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ করে সুবিচার ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেওয়াও আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত তিন মাসে পত্রিকার হিসাবে দেড় হাজার লোক খুন হয়ে গেছে। গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসরন বেগম খালেদা জিয়।খালেদা জিয়া বলেন, দেশজাতির এক গভীর সঙ্কটকাল চলছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই। বৈধ সংসদ নেই। তথাকথিত সংসদে কোনো কার্যকর বিরোধী দল নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে সুশাসন নেই। সুবিচার নেই। রাষ্ট্রীয় প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আইনের শাসন নেই। নেই কোনো মানুষের নিরাপত্তা। সরকার কাউকে কোথাও কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তবুও দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা।বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো স্বাভাবিকভাবে আইন অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছে না। তাদেরকে রাখা হয়েছে শুধু গণবিচ্ছিন্ন ও অবৈধ সরকারকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করার জন্য। তারা সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিচার বহির্ভূতভাবে যাকে খুশি তাকে হত্যা করছে। জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও খুন করে ফেলছে। যেখানে সেখানে খুনের শিকারদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের লাশের সন্ধানও মিলছে না। জুলুম, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, হামলা, মামলা চলছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে সম্মানিত নাগরিকদেরকেও নির্যাতন করা হচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গ টেনে এনে খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের আটশো কোটি টাকা ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। দফায় দফায় অবিশ্বাস্য রকমের ব্যয় বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে।

দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই উল্লেখ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং গুম-খুন ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধে নেতাকর্মীসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।তিনি বলেন,‘গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, দূতাবাস কর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরনের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে। আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর নামে এসব হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় প্রতিটি নাগরিক আজ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। সরকার এসব হামলা ও হত্যার ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না।এ প্রসঙ্গে বিএনপি প্রধান আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির কথা তারা (সরকার) অস্বীকার করছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। বরং তারা এর দায়দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে।তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দিয়ে তারাই (সরকার) জঙ্গিবাদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি। আমরা মানুষের নিরাপত্তা চাই। আমরা সবার জন্য নির্বিঘœ জীবন চাই। আমরা মনে করি, সেই নিরাপত্তা সরকারকেই দিতে হবে।

নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র আনতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুবিচার ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শান্তি ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য যে সেখানে আছেন সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে।খালেদা জিয়া বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিটে কনভেনশনস্থলে এসে উপস্থিত হলে মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানে স্লোগানে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান নেতাকর্মীরা। ২০ দলীয় জোটনেত্রীও হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এর আগে, বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে রওয়ানা হন খালেদা জিয়া।জাগপার প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ঢাবির শিক্ষক অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, কলামিস্ট সঞ্জীব চৌধুরী, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপিকা রেহেনা প্রধান, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিন প্রমুখ। এতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ। ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমুখ