তীব্র দাবদাহে কোন সুখবর নেই। চলতি মাসে শতকরা ৫৮ ভাগ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যঞ্চল তাপমাত্রা ৩৬ ধেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠনামা করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ ।এদিকে, প্রচন্ড রোদ গরমে অথিষ্ঠ হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ। ভ্যাপসা গরমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অস্বস্তিতে ভুগতে গেছে অনেককে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে একদিকে গরম অন্যদিকে লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তি মানুষ। প্রচন্ড দাবদাহে যেন জীবনের চাকা ঘুরছে না । এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোড় বালাই। তবে বেশীরভাগই আক্রান্ত হচ্ছে পানি বাহিত রোগ ও ডায়রিয়া। হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। ফলে জায়গা সংকটে বিপাকে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ ও সেবা প্রত্যাশীরা। তিন সপ্তাহের বেশী সময় ধরে সূর্যেও টানা এই চোখ রাঙ্গানীতে হাপিয়ে উঠেছে জনজীবন । কেননা গেল তিন দশকে প্রকৃতির এমন বাড়াবাড়ি দেখেননি দেশের মানুুষ । কিন্তু বাস্তবে রোদেও প্রখরতা যেন একটু বেশীই। প্রকৃতির এই খামখেয়ালীর সাথে যেন দিন দিন খেই হারিয়ে ফেলছে কোলের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার শরীর । আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে।
শুক্রবার রাজধানীতে সবোর্চ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সর্বোচ্চ ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসেয়িাস। শুক্রবার রাজশাহী সবোর্চ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসেয়াস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো কয়েকদিন তীব্র দাবদাহ চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে শনিবারও তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা টাঙ্গাইল গোপালগঞ্জ রাঙামাটি চাদপুর নোয়াখালি দিনাজপুর সৈয়দপুর, বরিশাল ও খুলনা বিভিাগের অবশিষ্টাংশর উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। এ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পাওে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে, মডারেট রেজল্যুশন ইমেজিং স্পেকট্রোরেডিওমিটার (এমোডিস) নামের কৃত্রিম উপগ্রহের ডেটা ব্যবহার করে তৈরি ছবিটি উন্মুক্ত করেছে নাসার আর্থ অবজারভেটরি টিম, যাতে ১৫ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এশিয়া অঞ্চলের ভূমির তাপমাত্রা দেখানো হয়েছে। হলুদ রং সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রা বোঝায়।তীব্র দাবদাহে পুড়ছে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা এযাবৎকালের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। প্রাণঘাতী এ তাপপ্রবাহে ইতিমধ্যে ১৫০ জন মারা গেছে।
থাইল্যান্ডে সাধারণত এপ্রিল মাসে তীব্র গরম পড়ে। গত ৬৫ বছরের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা দেশটির জন্য একটি রেকর্ড। গত ১২ এপ্রিল থাইল্যান্ডের সুখোথাইয়ে তাপমাত্রা ৪৪ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে পৌঁছায়, যা দেশটির সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডের কাছাকাছি। শুধু থাইল্যান্ড নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও এপ্রিল তাপপ্রবাহের দিক থেকে অন্যান্য সব মাসের চেয়ে রেকর্ড করে ফেলেছে।কম্বোডিয়ার আবহাওয়াবিদ ক্রিস বার্ট বলেন, কম্বোডিয়া ও লাওসে এপ্রিলের তাপমাত্রা এ বছরের অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় রেকর্ড গড়েছে।এপ্রিল মাস আবহাওয়ার দিক দিয়ে ভারতের জন্য নিদারুণ। বৃষ্টিবাদলের দেখা না মেলায় পুরোটা মাস দাবদাহের মধ্য দিয়ে কেটেছে।
চলতি মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহটি বয়ে যাচ্ছে। ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে দাবদাহ। এপ্রিলে সাধারণত যে গড় তাপমাত্রা থাকে, এখন তাপমাত্রা তার চেয়ে সারা দেশে ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে সাধারণত এক থেকে দুটি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়, যা সর্বসাকল্যে ছয় থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। এর আগে ১৯৯৫ সালে দেশের ১২টি জেলায় ঘুরেফিরে আট দিন দাবদাহ ছিল। এরপর ২০০৭ সালে সাতটি জেলায়, ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে ছয়টি জেলায় পাঁচ থেকে ছয় দিন দাবদাহ বয়ে গেছে। কিন্তু টানা ২৪ দিন দাবদাহ চলতে দেখা যায়নি। এবারের বৈশাখকে গত ৩০ বছরের মধ্যে বিশেষ ব্যতিক্রম হিসেবেই বলছেন আবহাওয়াবিদেরা।অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তাসলিমা ইমাম বলেন, এল নিনো নামে আবহাওয়ার এক বিশেষ অবস্থার কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝ বরাবর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে আফ্রিকা থেকে শুরু হয়ে পূর্ব এশিয়া হয়ে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত আবহাওয়াগত খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে,যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে।আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট এল নিনোর প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতে তাপমাত্রা বেড়েছে। গবেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। তথ্যসূত্র: ম্যাশেবল, আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অন্যদিকে, তীব্র তাপদাহের জন্য শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় মাধ্যমিক স্ত রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকালের স্কুল চালু করার সুযোগসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ নির্দেশনাগুলো সাময়িক হিসেবে বিবেচিত হবে।মাউশির উপপরিচালক এ কে এম মোস্তফা কামাল বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-তাপদাহের কারণে ক্ষেত্রবিশেষে প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত ও স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিচালনা কমিটি বিদ্যালয়ের নির্ধারিত শ্রেণি কার্যক্রমের সময়সূচি পুনর্বিন্যাস করতে পারবে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘মর্নিং স্কুল’ করা যেতে পারে। প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত করে দ্বিতীয় পালা (শিফট) থাকা বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে
খুলনা: সূর্যের তাপদাহে যেন পুড়ছে সবকিছু। চারদিকে খরতাপে বৈশাখের এ তীব্র তাপদাহের সঙ্গে লোডশেডিং খুলনায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এতে ঘামে ভিজছে গ্রাম থেকে শহরের মানুষ। বিশেষ করে নগরবাসীর জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন তারা। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ।এমনকি গরমের কারণে স্কুল-কলেজগুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ভ্যাপসা গরমে ও তাপদহে খেটে খাওয়া মানুষসহ সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। তাপ প্রবাহের কারণে অনেক এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে মধ্যে খুলনার আকাশে মেঘের ঘনঘটায় আশার সঞ্চার হলেও বৃষ্টির দেখা না মেলায় হতাশ হতে হচ্ছে।আকাশে কোথাও কোথাও কালো মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর ফলে আরও কয়েকদিন গরম সহ্য করতে হবে নগরবাসীকে।র্যয়েলের মোড় এলাকারা কলেজ ছাত্র সোহান বলেন, লোডশেডিং গরমকে আরও অসহনীয় করে তুলছে। ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে ৭-৮ বার। বিশেষ করে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬-৭ বার বিদ্যুৎ গেছে। এতে রাতে ঘুমানো যায়নি।তিনি জানান, লোডশেডিং এর কারণে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের।রূপসা এলাকার কৃষকরা জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণে অনেক এলাকায় পানির পাম্প ঠিকমতো কাজ করছে না। ফলে ক্ষেতে পানির চাহিদা মেটাতে পারছেন না তারা।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া এলাকার কৃষক রইচ উদ্দিন মিয়া বলেন,দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি নেই। গভীর নলকূপেও পানি পাচ্ছি না। দারুণ পানি সংকটে আমার ক্ষেত শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। তবে, তাপমাত্রা নিয়ে কষ্টে থাকলেও বৃষ্টি না হওয়া নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন বোরো চাষিরা।
এদিকে, বিদ্যুতের লোডশেডিং সম্পর্কে শনিবার সকালে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) সঙ্গে যোগাযোগ করলে লোডশেডিং এর তথ্য জানাতে পারেননি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা।খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়া কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বেলা ১১টা ১১মিনিটে জানান, বিরাজমান আবহাওয়া অন্তত আরও দুই তিনদিন থাকবে। এরই মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে ৩ থেকে ৪ মে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তিনি জানান, শুক্রবার খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবারও সেরকম থাকবে।
জাতীয়
ফেনী: ফেনীতে তীব্র গরমে অতিষ্ট জনজীবন। জেলার সর্বত্র গরমে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। গত কয়েকদিন ফেনীতে গড়ে তাপমাত্রা ছিলো ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) তা বেড়ে ৩৫.৬ ডিগ্রিতে পৌঁছায়। যা এ বছরের মধ্যে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করেছে আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস। ফেনী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক ফারুক মো. আবদুল হাই জানান, সহসা বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ক্রমাগত তাপমাত্রা বেড়ে চলছে। প্রচন্ড গরমে জেলায় ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ গরমজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ইতিমধ্যে ফেনী সদর হাসপাতালসহ উপজেলা কমপ্লেক্সে অনেক রোগী ভর্তি হয়েছেন। গরম বাড়ার কারণে ইতিমধ্যে কয়েকজন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। ফেনী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শনিবার সকাল থেকে বাড়ছে রোগীর চাপ। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও রোগীর চাপ বাড়তে পারে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সাহা জানান, গরমে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে ফুটানো পানি ব্যবহার, গরম থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে গোসল না করা, রাস্তার পাশের বিভিন্ন শরবত ও আখের রস না খাওয়ায় পরামর্শ দেন তিনি।শহরের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, চলতি পথে রোদের প্রচণ্ড তাপে ত্রাহি অবস্থা শহরবাসীর। বেড়েছে হাতপাখার বিক্রি। ফেরিওয়ালারা ভ্যানে করে বিক্রি করছেন নানা শরবত। নিম্ন আয়ের মানুষ তৃষ্ণা মেটাতে ভিড় জমাচ্ছেন এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে। বেশি ভোগান্তীর শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। ফেনী সদরের বালুয়া চৌমুহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শীতলীকরণ ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা কষ্টকর হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আগাম গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণার দাবি জানান তিনি।এদিকে ইরি মৌসুমে ধান কাটা শ্রমিকরা মাঠে কাজ করতে পারছে না প্রচণ্ড তাপের কারণে। উপজেলার সোনাগাজীর আব্দুল হালিম নামে এক কৃষক জানান, আমরা এ পিঠপোড়া গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ছি। তাই ঠিকঠাক মাঠে যাইতে পারছি না।গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ ঠিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফেনী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগকে। ফেনীতে স্বাভাবিক সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ৭৫-৮০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ মেগাওয়াটে। ফলে কোনোভাবেই স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে লোডশেডিং মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। ফেনীর শিল্পনগরীর বিভিন্ন কারাখানায় লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। ফেনী একাডেমির এলাকার এক বাসিন্দা জানান, সারাদিনই বিদ্যুৎ যায় আসে। রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না। প্রচণ্ড গরমে বাসাবাড়িতে থাকা দুরুহ হয়ে পড়েছে। বেশি কষ্ট হয় বাচ্চা ও বৃদ্ধদের।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ বিভাগ ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। সেই তুলনায় অর্ধেক সরববাহ পাওয়ায় গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।তাপমাত্রা কমলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে। তখন সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, জানান তিনি।
রাজশাহী:গত বকয়েকদিন ধরে সূর্যের আগুনে পুড়ছে রাজশাহী। সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একই মাত্রায় তাপ নামছে। প্রখর রোদে মাটি ফেটে চৌঁচির হচ্ছে।ভবনের ট্যাপ দিয়ে বের হচ্ছে গরম পানি। তেঁতে উঠেছে আসবাবপত্রও। দুপুর গড়াতেই খাঁ খাঁ করছে পথঘাট। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রকৃতির তপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাসে দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও হাঁসফাঁস করছে। হাফ ছেড়ে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এর আগে গত ২৩ এবং ২৮ এপ্রিল ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছিলএর আগে ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে অবর্ণনীয় গরমে জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে। অব্যাহত তাপমাত্রায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে এ তীব্র গরমে।আগুনমুখো আবহাওয়ার কারণে কর্মজীবী মানুষ ছাড়া কেউই খুব জরুরি কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। একটু সুশীতল ছায়ার জন্য মহানগরবাসী যেন উন্মুখ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কোথাও প্রশান্তি নেই। এবার চলতি মৌসুমের তাপ প্রবাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, দুপুরে মহানগরীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ-কালের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে এ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আলম বলেন, রাজশাহীর ওপর দিয়ে বর্তমানে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে যা, অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া চলতি মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১-২টি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) বয়ে যেতে পারে। ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী মাসে বঙ্গোপসাগরে দু’একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। এর প্রভাবে দেশে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।