Gazipur-Rustom Ali Hawlader- Pic (2)

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের অবসর পূর্ব ছুটিতে থাকা (পিআরএল) সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর রুস্তম আলী হাওলাদার কারা ফটকের সামনে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী হিমেল আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকেলে গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত নং-৩ এর বিচারক ইকবাল মাসুদের আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুরের কবর থেকে উত্তোলনের জন্য তার স্ত্রী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ওই খুনের ঘটনায় অপরাধবিষয়ক সকল কিছুকে মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

গাজীপুরের কোর্ট ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর রুস্তম আলী হাওলাদার খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী হিমেল আহমেদকে বুধবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইকবাল মাসুদের আদালতে হাজির করা হয়। এসময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হিমেলের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নিহতের স্ত্রী নাছরিন আক্তার জানান, পিরোজপুরের নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুরের কবর থেকে উত্তোলনের তিনি বুধবার গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। ময়না তদন্ত শেষে নিহত রুস্তম আলীর লাশ সোমবার গাজীপুর মহানগরের দেউলিয়াবাড়ী এলাকায় দাফন করা হয়।

এব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম জানান, পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুরের কবর থেকে উত্তোলনের জন্য তার স্ত্রী বুধবার আবেদন করেছেন। আইন অনুযায়ি প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর রুস্তম আলী হাওলাদার খুনের ঘটনায় আটক হিমেলের বাবা হাছান আলী তার ছেলে নির্দোষ এবং তার মুক্তি দাবী করেছেন। হিমেলকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে এসময় তিনি অভিযোগ করেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ দাবী করেন। এব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গাজীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন জানান, রুস্তম আলী খুনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সকল আসামীদের গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য স্থানগুলোতে অভিযান চলছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য অপরাধের সব কিছুকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে পুলিশ। খুব শীঘ্রই প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে সচেষ্ট হবো। তবে তদন্তের স্বার্থে এমুহুর্তে অনেক কিছুই প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের প্রাক অবসর ছুটিতে থাকা (পিআরএল) সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর রুস্তম আলী (৫৯) সোমবার সকালে কারা ফটকের সামনে ফার্মেসীর দোকানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। তার দেহে মোট ৬টি গুলি বিদ্ধ হয়। এঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের জামাতা সোহেল রানা, ফার্মেসীর মালিক সাইফুল ইসলাম ও পথচারী রফিককে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়।
নিহতের স্ত্রী নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে মঙ্গলবার জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৪ জনের নাম উল্লেখ এবং আজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ ওই মামলার প্রধান আসামী মোঃ হিমেলকে (২২) গ্রেফতার করেছে। সে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দেওলিয়াবাড়ির হাসান আলীর ছেলে এবং রাজধানীর উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র। নিহত রুস্তম আলী হাওলাদার (৫৯) কুমিল্লা জেলার কতোয়ালী থানার দক্ষিণ চরতা গ্রামের আব্দুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে। তবে তার জন্মস্থান পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার চড়গাছিয়া এলাকায়।

এদিকে, এঘটনা তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষ পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যে ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দারকে প্রধান করে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলাইমানকে প্রধান করে গাজীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।