Rajshahi Selim Jahangir 24,04 16 5 copy

অধ্যাপক রেজাউল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের পাশাপাশিসোমবার পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচির পালন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।বেশ কয়েকটি বিভাগের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের অফিস রুম খোলা থাকলেও শ্রেণি কক্ষগুলো বন্ধ দেখা যায়। ক্যাম্পাসের ব্যস্ততম এলাকা ‘টুকিটাকি চত্বর’ ছিল প্রায় ফাঁকা।পরে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে থেকে শোক মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন। সিনেট ভবনের সমনে এসে শিক্ষক সমিতির মৌন মিছিল ও সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করেন তারা।

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁর নাম হাফিজুর রহমান।হাফিজুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।শনিবার রাতে তাঁকে নগরের ছোট বনগ্রাম এলাকা থেকে আটক করা হয়।নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাফিজুরকে আটক করা হয়েছে। শনিবার সকালে ক্লাস নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শহরের শালবাগান এলাকায় হামলার শিকার হন ইংরেজির অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী (৫৮)। গত এক যুগে এ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন অধ্যাপক খুন হলেন।পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ জানাতে পারেনি। তবে হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে বলছে, অন্যান্য ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের হত্যার সঙ্গে এই হত্যার মিল রয়েছে।এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি তৎপরতা নজরদারির ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্র“প গতকাল এক টুইটার বার্তায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) পরিচালিত আমাক নিউজ এজেন্সির বরাতে জানিয়েছে, অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস। টুইটার বার্তায় বলা হয়, নাস্তিকতার দিকে আহ্বান জানানোর দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপককে হত্যা করেছে আইএস। তবে এর আগে সর্বশেষ অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করেছিল আনসার আল ইসলাম (আনসারুল্লা বাংলা টিমের নতুন নাম)।

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম রোববার বিকালে জনান, শনিবার রাতে নগরীর ছোটবোনগ্রাম এলাকার বাসা থেকে হাফিজুর রহমান নামের ওই যুবককে তারা আটক করেন।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাফিজুর মহানগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি।তাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি।রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন সকালে এক যুবককে আটকের খবর দিলেও সে সময় ওই যুবকের পরিচয় প্রকাশ করেননি, কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না- তাও তিনি বলেননি।শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষককে। মোটর সাইকেলে আসা দুই যুবক তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে পুলিশ।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে শনিবারই খবর দেয় জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী এক ওয়েবসাইট। পুলিশ কমিশনার নিজেও জঙ্গি গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথা বলেছেন।নিহত অধ্যাপকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ শনিবার রাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করার পর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এই তদন্তের সার্বিক দিক তদারকির জন্য গঠিত মনিটরিং টিমের’ সদস্যরা রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন।উপাচার্য বাসভবনে ওই বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন এবং মনিটরিং টিমের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার তমিজউদ্দিন সরদার।তমিজউদ্দিন সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনাকে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। আশা করছি, হত্যায় জড়িতদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ।কমিশনার শামসুদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। যে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে থাকেন, তাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।পাশাপাশি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের অফিস রুম খোলা থাকলেও শ্রেণি কক্ষগুলো বন্ধ দেখা যায়।ক্যাম্পাসের ব্যস্ততম এলাকা ‘টুকিটাকি চত্বর’ প্রায় ফাঁকা। ক্যাম্পাসের ভিতরের রাস্তায় অন্য দিনের মতো রিকশা চলাচল চোখে পড়েনি।এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি মানববন্ধন ও বিক্ষোভের কর্মসূচি রয়েছে শিক্ষক সমিতির। এ কারণে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়ার শালবাগান এলাকায় বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে অধ্যাপক রেজাউলকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।এই হত্যাকাণ্ড রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিহ্বল করে দিয়েছে মন্তব্য করে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু বলেন, বারবার কেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হচ্ছে? আমরা সরকারের কাছে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সহকর্মী রেজাউল স্যারের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষকরা।বিকাল ৫টায় নগরীর সাহেববাজারের জিরো পয়েন্টে প্রতিবাদী সমাবেশ করা হয় বলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক শিক্ষক খুন হতে থাকলেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ পড্রকাশ করে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন বলেছেন, কালো শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারলে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর মতো সবাইকেই হয়তো খুন হতে হবে। পিছনের দিকে তাকালে আমরা অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সেটা দেখতে পাচ্ছি। এটা দেখে প্রতিদিন মনে হচ্ছে আমরা হত্যার মিছিলে শামিল হচ্ছি। যেভাবে শিক্ষক ও মুক্তমনাদের হত্যা করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এবার আমাদের সবাইকে হত্যা করা হবে।অধ্যাপক রেজাউলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মৌন মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেন উপচার্য।

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শালবাগানের সপুরা এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ খুন হন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল। মোটর সাইকেলে আসা দুই যুবক তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছে পুলিশ। শিক্ষক রাজনীতি থেকে দূরে থেকে অধ্যাপনা, সাহিত্য আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মেতে থাকা শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিমকে কারা-কেন হত্যা করলো, তার জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। তবে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী এক ওয়েবসাইট খবর দিয়েছে। পুলিশও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথাই বলছে।এর আগে ২০১৪ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম, ২০০৬ সালে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যার এস তাহের আহমেদ এবং ২০০৪ সালে অর্থনীতির ড. ইউনুস খুন হন।এক যুগে চার শিক্ষককে এভাবে হারানোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে উপাচার্য বলেন, শক্ষকরা চরম সঙ্কটে পড়েছে। আমরা হত্যাকারীদের দেখতে পাচ্ছি না। তাদের বিচারও হচ্ছে না। আমার বিভিন্ন সহকর্মীকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এই মন শান্ত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই হত্যাকারীদের সামনে আনা না হবে।উপাচার্য বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের এই কালো শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আমরা যদি প্রতিরোধ করতে না পারি তাহলে আমাদের দুঃখ কখনোই মোচন হবে না।সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এ এফ এম মাসউদ আখতার, অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক মো. জহুরুল ইসলাম এই সমাবেশে বক্তব্য দেন।শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু সমাবেশে বলেন, বারবার কেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হচ্ছে? আমরা সরকারের কাছে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। সোমবারও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রতিবাদ জানানো হবে বলে জানান তিনি।

ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম জানান, হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সিনেট ভবনের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া সোমবার বিভাগে হবে শোকসভা। এদিকে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠন এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দশ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে তারা মৌন মিছিল করে ক্যাম্পাসে ফেরেন।