কমিশনার মনিরুল ইসলাম

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদে সাংবাদিক শফিক রেহমান আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ছাড়া আরও তিনজনের নাম বলেছেন। পুলিশ ওই নামগুলোর যাছাই-বাছাই করে দেখছে। ওই তিনজনের সম্পৃক্ততা থাকলে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই তিনজনের নাম প্রকাশ করবেন না তাঁরা।রোববার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার পাঠানোর খবর তাঁরা শুনেছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ডলার সাংবাদিক শফিক রেহমানের নামে যাওয়ার খবরও তাঁরা শুনেছেন। বাকি ২০ হাজার কাদের কাদের নামে গিয়েছে, তা তাঁরা খুঁজে দেখছেন। এসব তথ্য যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে।ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল সোমবার মাহমুদুর রহমানকে আদালতে নিয়ে রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুলিশ গত বছরের আগস্টে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। ১৬ এপ্রিল ডিবি পুলিশ শফিক রেহমানকে আটক করে। পরে তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পল্টন থানার পুলিশ। ওই মামলা তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হয়। এরপর গত শুক্রবার শফিক রেহমান দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এই মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেনের যে দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে করা হয়েছে তা ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ বলে নাকচ করেছে পুলিশ।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওই বক্তব্যের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদে শফিক রেহমানের দেওয়া তথ্যের কোনো মিল নেই বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চক্রান্তে’ এফবিআই কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার মামলার বিচারে তার ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উঠেছে।ওই বিচারের সূত্র ধরে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হলেও ওই লেনদেন নিয়ে কেন কথা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির মহাসচিব।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে পেশকৃত মার্কিন সরকারের ডকুমেন্টে ‘ইনডিভিজুয়াল ওয়ান’ অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয় ও ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে সরকার টু শব্দ করছেন না কেন? শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকগুলোর যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে তার বিচারও কেন হচ্ছে না?তবে তার ওই বক্তব্য নাকচ করে ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, শফিক রেহমান জিজ্ঞাসাবাদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে তার মিল নেই। আমরা জানি না যিনি বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে শফিক রেহমানের সঙ্গে তিনি নিজে কথা বলেছেন কি না। আমাদের ধারণা কথা বলেননি।

আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পেরেছে তাকে আইনের মধ্য থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেখানে তার ওপর কোন চাপ প্রয়োগ বা নিপীড়ন করা হয়নি। উনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেই তথ্যর ভেতরে তিনি সব কিছুই উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এবং অন্যান্য এফবিআইয়ের তদন্তের কিছু ডকুমেন্ট যেগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি, সেগুলোতে স্পষ্ট বলা হয়েছে কী কারণে তাদের সাজা হয়েছে।কাজেই সংবাদ সম্মেলনে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেটি তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য। রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।শফিক রেহমানের বাসা থেকে এফবিআইয়ের গোপন নথি’ উদ্ধারের দাবি করলেও পুলিশ তা আদালতে জমা দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবীরা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আলামত আমরা জব্দ করেছি। যথা সময়ে সেগুলো আদালতে জমা দেওয়া হবে।