আওয়ামীলীগের পাঁচ বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিস্কার

দেশের ৪৮ জেলার ৮৭ উপজেলায় ৬১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপে তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচন নির্বিঘœ করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।  নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী বিশেষ নিরাপত্তায় গতকালই পৌঁছে গেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে।

ভোটারদের নির্বিঘেœ কেন্দ্রে এসে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, ‘আপনারা আপনাদের ভোট দেবেন। কেউ বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। যদি কেউ বাধা দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী যে পর্যায়েরই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হয়।’  তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো শক্ত অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাদেরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তৃতীয় ধাপের ৬১৪ ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হচ্ছে ৫৯১ ইউপিতে। কেননা ২৫ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সদস্য ও মহিলা সদস্য পদে ভোটগ্রহণ হচ্ছে ৬১২ ইউপিতে। দু’টি ইউপিতে সব পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওই দুই ইউপির একটি হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরমোহনা, অপরটি একই উপজেলার চরবংশী (উত্তর)।  নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ২ হাজার ৬৭০ জনের মতো। সাধারণ সদস্য পদে রয়েছেন প্রায় ২১ হাজার জন। আর সংরক্ষিত সদস্য পদে রয়েছেন প্রায় ৬ হাজার ৩শ’ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৭৪ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৫ জন ভোটার ৬ হাজার ৭৫টি ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও ২ লাখের মতো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।

১৪টি রাজনৈতিক দল তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ৪৮৭ জন প্রার্থী দিয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ১৮৫ জন। দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছে ৬২০ জন, বিএনপির ৫৩৯ জন, জাতীয় পার্টির ১৬৭ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ’র ২৬ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১২ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ৯২ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি’র ৩ জন। এছাড়া খেলাফত মজলিসের ২ জন প্রার্থী, বিকল্পধারার ৩ জন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ৫ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র ১০ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ’র ৩ জন, বাসদ ১ জন ও অন্যান্য ৪ জন।

নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। একইসঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নানা অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে থাকছেন।  ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে। নির্বাচনে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। স্বেচ্ছায় এলাকা না ছাড়লে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ভোটের মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবিটেক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো প্রভৃতি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী তিনদিন থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এছাড়া ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌ-যান ও স্পিটবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে। তবে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকছে।  দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউপিতে এবার ৬ ধাপে ভোটগ্রহণ করছে ইসি। ইতোমধ্যে দুই ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ। এরপর ২৮ মে পঞ্চম ধাপ ও ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইউপি নির্বাচন।