পোশাক শিল্পে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি টিআইবি

২০১৩ সালের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক শিল্পের উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, এর ফলে পোশাক শিল্পের বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। রানা প্লাজা ধস মামলার বিচার কাজে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মাইডাস ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে টিআইবি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করে।সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি। সকালে টিআইবি’র কাযালয়ে তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন : অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর-ই- খোদা ও অ্যাসিসটেন্ট মম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা।গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজার মামলায় ৪১ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিট আদালত আমলে নিয়েছেন। এ মামলায় ২৪ জন পলাতক অসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরপর দুইবার সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুদক কর্তৃক দায়ের ৪টি মামলার একটিতে কেবল চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।দীর্ঘ তিন বছর পর তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ৩০ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়েছে।অন্যদিকে পোশাক শিল্প পার্কে তৈরির কাজে বিজিএমইএ’ র আগ্রহ কমে গেছে বলে জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পণ্যের মূল্য ৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানা যায় টিআইবির প্রতিবেদন থেকে।টিআইবি থেকে আরো জানানো হয়, ইপিজেড শ্রম আইনে বিভিন্ন বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনের প্রক্রিয়াটি জটিল করা হয়েছে। কল কারখানা পরিদর্শনে যে পরিমান পরিদর্শক আছে তাও যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে দেশের ১০ শতাংশ কারখানায়ও ট্রেড ইউনিয়ন নেই।তবে গত তিন বছরে পোশাক শিল্পের যথেষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিন বলেন, পোশাক শিল্পে যে অগ্রগতি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। ক্রেতারা তাদের মূল্য বাড়ানোর কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের মূল্য কমেছে উল্লখযোগ্য হারে। নীতি, অবকাঠামো ও আইনী কাঠামো কতোটা বাস্তবায়ন হচ্ছে সে বিষয়ে নজর দিতে। কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ নিশ্চত করতে হবে। পোশাক শিল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক জানিয়ে তিনি বলেন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর বিগত ৩ বছরে পোশাক শিল্পের যে অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে, এতে করে মোটাদাগে বলতে পারি এত অল্প সময়ে পোশাক শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যদি পরিসংখ্যানের দিক থেকে বলা হয়, তাহলে বলতে পারি ৭৭ শতাংশ অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে।তবে রানা প্লাজা ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি আওতায় না আনলে এ অগ্রগতি অর্থহীন হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান ।

তিনি বলেন,পোশাক শিল্পের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে ৬৩টি বিষয় চিহ্নিত করা হয় এবং ১০২টি উদ্যোগ পর্যালোচনা করে গবেষণা করা হয়েছে। এতে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে এ সকল উদ্যোগের মধ্যে ৩৪টি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে এবং ৬৮টি উদ্যোগের বেশির ভাগ বা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। এর ফলে পোশাক শিল্পে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সার্বিকভাবে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর পোশাক শিল্পে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।তবে এ অগ্রগতিকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। অর্জনগুলো ধরে রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

পোশাক শিল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক কারখানায় শ্রমিকের অধিকার রক্ষার জন্য শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু দুর্বলতা আছে। অনেক মালিক বলেন, তোমাদের বেতন-ভাতা দিচ্ছি আবার ইউনিয়ন কেন? এ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মালিকের প্রভাবমুক্ত হয়ে ইউনিয়নের কাজ চালাতে হবে। পোশাক কারখানাগুলোতে সরকার কর্তৃক যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়েছে তার ৯২ ভাগ কারখানায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে এ ন্যূনতম মজুরি জীবনযাত্রার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না তা আলোচনা সাপেক্ষ, বলেন তিনি।রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রানা প্লাজার মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। এ মামলায় যারা আইনের বাইরে আছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশ বাংলাদেশ (টিআইবি)। কিন্তু আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তোলেন সরকারের লোকেরা। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জান বলেন, টিআইবি‘র আয়-ব্যয়ে হিসাব নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে। আমরা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করি- এজন্য স্বচ্ছতা বিষয়টি পছন্দ করি। টিআইবি সরকারের অনুমতি ছাড়া একটা টাকাও তোলে না। সরকারের অনুমতির কারনে টাকা উঠানো এখনও পেন্ডিং আছে।

ড. ইফতেখার বলেন, টিআইবি সরকারের কাছে সব সময় আয় ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছে। টিআইবি‘র যারা ট্রাস্টি, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক তাদের সবার আয় ব্যয়ের হিসাব সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া আছে। কার কত সম্পদ আমাদের ওয়েবসাইটে আপডেটসহ দেয়া আছে। যে কেউ ঢুকলে দেখতে পাবেন।গত ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় টিআইবি‘র আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সংস্থাটিকে জনগণের সামনে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে তারা যে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না তা প্রমাণের আহ্বান জানান।এমনকি জাতীয় সংসদেও টিআইবি কর্মকর্তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে প্রশ্ন তোলেন এমপিরা।এদিকে রানাপ্লাজার দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতের উন্নয়নে গৃহিত পদক্ষেপের সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। একই সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে পোশাক খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি। যদিও এর আগে বিভিন্ন সময় টিআইবি পোশাক খাত নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছে। এবার এমন ইতিবাচক মন্তব্য কি উদ্দেশ্যমূলক– এমন প্রশ্ন টিআইবির নির্বাহী বলেন, টিআইবি কখনও উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করে না।