20-04-16-Muazzin Balal Hossain Murder Case-1

রাজধানীর ইসলামপুরের ঝব্বু খানম জামে মসজিদের নিয়ন্ত্রণ ও অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেনকে (৪৯) হত্যা করেছে গ্রেফতারকৃত আসামিরা। মসজিদের নিচতলায় দুটি ফ্লোরে ৩৩টি দোকান আছে। ওই দোকান থেকে প্রতি মাসে ৪২ হাজার টাকার ভাড়া এবং মসজিদের দানবাক্স থেকে ১০/১২ হাজার টাকা আসে। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে মসজিদের আয় হতো। মসজিদের কোনো কমিটি না থাকায় দীর্ঘদিন এই অর্থের নিয়ন্ত্রণ মুয়াজ্জিন বেলালই করতেন।

এসব অর্থ আত্মসাৎ ও পুরো মসজিদের নিয়ন্ত্রণ পেতেই খাদেম হাবিবুর রহমান (২০) মুয়াজ্জিনকে হত্যা করেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মো. মোশারফ হোসেন (১৯), তোফাজ্জল হোসেন (২৩) ও সারোয়ার হালিম (৩৮)। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও একজন জড়িত রয়েছে। তাকে আটক করা যায়নি।

বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মফিজউদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসলামপুরের ঝব্বু খানম জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচজন জড়িত রয়েছে। আমরা হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হাবিবসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও একজন আসামি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেন এই মসজিদে চাকরি করছিলেন। মসজিদের আয়ের অর্থ থেকে বিভিন্ন লোকদের বেতন দেওয়ার পর বাকি অর্থ নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখতেন। এই অর্থ বাইরে বিভিন্ন লোকের কাছে তিনি লাভে খাটাতেন।

মসজিদের খাদেম হাবিব ও দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন মোশারফ নিহত বেলালের এই একচ্ছত্র কর্মকাণ্ড সহ্য করতে না পেরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর আগে মুয়াজ্জিন বেলালকে তারা আরও দুইবার হত্যা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তবে তৃতীয় বার তাদের পরিকল্পনাটি সফল হয় বলেও জানান উপ পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, দুই বছর যাবৎ তারা মুয়াজ্জিন বেলালকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কেরানীগঞ্জের একটি মসজিদে বসে এই হত্যা পরিকল্পনায় অংশ নেন হাবিব, মোশারফ, তোফাজ্জল ও সারোয়ার।

উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, হত্যার দুইদিন আগে খাদেম হাবিব ছুটি নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি নড়াইলে চলে যান। হত্যার উদ্দেশ্যেই হাবিব নড়াইল থেকে সরাসরি কেরানীগঞ্জে তোফাজ্জলের কাছে যান। পরে ৩ এপ্রিল রাতে তিনি ইসলামপুরে মসজিদের ভেতরে অবস্থান করেন। বেলাল মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করার পর দোতলা-তিন তলার মাঝের সিঁড়িতে ছুরি দিয়ে পেটে কয়েকটি আঘাত করেন। মৃত্যুর পর বেলালের পকেট থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা ও মোবাইল নিয়ে যান তারা। ওই টাকা থেকে মোশারফকে ২ হাজার টাকা ভাগ দেয় হাবিব।

পরে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন ড্রেনে ফেলে দিয়ে তারা কেরানীগঞ্জ চলে যান। পরদিন সকালে সেখান থেকে আবার নড়াইল চলে যান হাবিব। ১৮ এপ্রিল হাবিবকে গ্রেফতারের পর হত্যায় ব্যবহৃত ওই ছুরিটি পুলিশ উদ্ধার করেছে বলেও জানান উপ পুলিশ কমিশনার।