কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য

টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন দিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে রাজাকারের ভাইকেও দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ কার্যালয়ে জেলা-উপজেলা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন কমিটি টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে একসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করার পর হেজলা ও উপজেলা নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।

আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি স্বাক্ষরিত পত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগের স্থানীয় সরকার/ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক দফা ২১.-এ বলা হয়েছে, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক এবং যে ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে নির্বাচনী বোর্ড গঠিত হবে। দফা ২২.-এ বলা হয়েছে, ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বর্ধিত সভা করে ১ জন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে।

কিন্তু জেলা ও উপজেলা কমিটি বাস্তবে ইউনিয়ন কমিটির কোন সুপারিশই মানেন নি। উপজেলা কমিটি প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীর কাছে নির্ধারিত জামানত রেখে মনোনয়নপত্র বিক্রি ও গ্রহন করেছেন। পরে জেলা ও উপজেলা কমিটি ওই একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে দর-দাম করে যিনি বেশি টাকা দিয়েছেন তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ফলে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে এবং সংগঠনে কোন্দলের সৃষ্টি হচ্ছে।

জানাগেছে, কালিহাতী উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৪৫জন প্রার্থী প্রতিজনে ১০ হাজার টাকা করে জামানত দিয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেন। কালিহাতী উপজেলায় অভিভাবক না থাকায় শুরু হয়, দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে দৌঁড়-ঝাপ। জেলা ও উপজেলার নেতাদের ম্যানেজ করতে প্রার্থীরা লাখ লাখ টাকা ঢালেন। এ সুযোগে রাজাকার-আলবদরদের বংশধররাও টাকার ফাঁদে ফেলে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পেয়ে বড় আওয়ামীলীগার বনে যান।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আ. হাই আকন্দ দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। ওই ইউনিয়নে বীরমুক্তিযোদ্ধা আ. হাই আকন্দের পরিবর্তে ৫ সহোদর রাজাকারের ভাই হযরত আলী তালুকদারের বাড়িতে জেলা ও উপজেলার নেতারা আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পৌঁছে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। একটি অসমর্থিত সূত্র মতে, জেলা ও উপজেলার নেতারা রাজাকারের ভাইয়ের কাছ থেকে দুই দফায় ৩০ লাখ এবং সর্বশেষ দফায় ১৯ লাখ টাকা নিয়ে তাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে।

এদিকে, ঘাটাইলের লোকেরপাড়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মো. জহিরুল ইসলাম জানান, তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক পেতে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক মো. শহিদুল ইসলাম লেবুর কাছে নগদ ১০ লাখ টাকাসহ আরও অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মনোনয়ন পাননি। শহিদুল ইসলাম লেবু তাঁর কাছ থেকে নেয়া ১০ লাখ টাকা গত ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফেরত দিয়েছেন। এভাবে অনেকের কাছ থেকেই জেলা ও উপজেলার নেতারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। ঘাটাইলের আনেহলা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. আনছার আলীসহ অনেকেই জেলা ও উপজেলা নেতাদের মনোনয়ন বাণ্যিজ্যের কথা স্বীকার করেন।

টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা একাধিক গোয়েন্দা দপ্তর মারফত তদন্ত করে মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জাতির জনকের যোগ্য উত্তরসুরি আওয়ামীলীগের কান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

প্র্রকাশ, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়ে জাতীয় প্রতীক তৃণমূলে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রত্যাশা ছিল, এতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হবে- জনগনও তার সুফল ভোগ করবে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্নরূপ দেখা যাচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন দেয়ার নামে যদু-মধুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে উপজেলার নেতারা মনোনয়ন বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। ফলে টাকা দিয়ে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে হালাল হয়ে যাচ্ছে রাজাকার-আলবদরদের বংশধর, হাইব্রিড, পোষাকী ও চামচা ধরণের স্থানীয় নেতারা।