তামাক কোম্পানিগুলো যে আইন মানতে চায় না তার প্রমাণ মিলেছে আবারো। ৭৫ শতাংশ তামাকপণ্যে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো গবেষণার পর এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ মার্চ থেকে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন করার কথা। ১৫ দিনের মাথায় ৪ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা দেখার জন্য দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে গবেষণা চালানো হয়। তারা ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।আরো বলা হয়, মোট ১ হাজার ৪৮৫টি সিগারেট, বিড়ি, জর্দা এবং গুলের প্যাকেট পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ (১ হাজার ১১১টি) প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। মাত্র ২৫ দশমিক ২ শতাংশ (৩৭৪টি) তামাকপণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর উপস্থিতি চোখে পড়েছে। গবেষণায় ১৪ ব্রান্ডের ৮৮টি বিড়ির প্যাকেটের একটিতেও সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণীর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। গবেষণায় প্রাপ্ত ৩৫টি ব্রান্ডের ৭০০টি সিগারেট প্যাকেটের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্যাকেটেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ছিল না।
সিগারেট উৎপাদনকারী ৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানই সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ ছাড়াই সিগারেট বাজারজাত করছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ২০৮টি ব্রান্ডের ৬৩৯টি জর্দার কৌটার মধ্যে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ কৌটাতেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মেলেনি। ১৬টি ব্রান্ডের ৫৮টি গুল কৌটা পর্যবেক্ষণ করে ৮৭ দশমিক ৯ শতাংশ কৌটাতে কোন সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পরিলক্ষিত হয়নি। গবেষণায় প্রাপ্ত ১০০টি জর্দা কারখানার মধ্যে মাত্র ১৪টি এবং ১৩টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ১টি গুল কারখানা সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করছে।তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ মার্চের পর থেকে মোড়ক বা প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যতীত কোনো তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কিংবা বাজারজাত করা আইনত দ-নীয় অপরাধ।গবেষণার মাঠকর্ম সম্পন্ন করতে ৮টি বিভাগীয় শহরে তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের পক্ষে ৭টি প্রতিষ্ঠান এসিডি, আহছানিয়া মিশন, সিমান্তিক, উবিনিগ, ইপশা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং ইসি বাংলাদেশ তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রজ্ঞা এই গবেষণায় কারিগরী সহায়তা প্রদান, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির কাজ করেছে। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ গবেষণা কর্মে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি সুপারিশ রাখা হয়েছে। তাহল-প্রাথমিকভাবে তামাক কোম্পানিগুলোকে প্যাকেট বা কৌটার অন্যূন ৫০ ভাগ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে বাধ্য করা। আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বিহীন তামাকপণ্য ধ্বংস করা এবং বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মোবাইল কোর্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি কার্যকর করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম, দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বিসিসিপি ডাইরেক্টর অ্যান্ড সিইও মোহাম্মাদ শাজাহান, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) গ্রান্টস ম্যানেজার ডা. মাহফুজুল হক ভুঁইঞা ও প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ।