সজীব ওয়াজেদ জয় - joy
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীসহ দলটির অন্তত এক ডজন নেতা। হত্যা ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন তারা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিল্টন ভূঁইয়া ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজার ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১১ ও ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ওই দু’জনের সঙ্গে সাংবাদিক শফিক রেহমানের একাধিক বৈঠক হয়। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেছেন ৫ দিনের রিমান্ডে থাকা শফিক রেহমান। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে হত্যা পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত একজনকে যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা কয়েকজন নেতা ও ব্যবসায়ীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগিরই ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস থেকে পাওয়া তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের ঘটনায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সিজারের স্বীকারোক্তিতে সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ বিএনপিপন্থী কয়েকজন ব্যবসায়ী ও নেতার নাম বেরিয়ে আসে। এদের বেশিরভাগই দীর্ঘদিন প্রবাসে রয়েছেন।

এদিকে জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবীর আদালতে মামলার তদন্তকারী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত এ আবেদন জানিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত মাহমুদুর রহমানকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো ও রিমান্ডের শুনানির জন্য ২৫ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দিদার আহমেদ বলেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিল্টন ভূঁইয়া ও বিএনপির সাংস্কৃতিকবিষয়ক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজারকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিশেষ করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় সিজারকেই মূল দায়িত্ব দেয়া হয়। এজন্য ৪০ লাখ ডলারের অলিখিত একটি চুক্তিও হয়।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের পর আমেরিকার নিউইয়র্ক, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ষড়যন্ত্রকারীরা একাধিক বৈঠক করে অর্থ সংগ্রহ করেন। ওই বছরের শেষদিকে সিজারকে চুক্তির ১০ লাখ ডলারও দেয়া হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাসরুকুর রহমান খালেদ বলেছেন, দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যাচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তার একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার টার্গেট করেছিল চক্রটি। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মনোবল ভেঙে দিয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় করে দিতে চেয়েছিল। ওই কর্মকর্তা বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন। জয় সম্পর্কে গোপন তথ্য পেতে ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জাসাস নেতা মামুনের ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজার তার পুরনো বন্ধু এফবিআইয়ের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট লাস্টিক ও থ্যালারের শরণাপন্ন হন। সিজার এফবিআইয়ের ওই দুই কর্মকর্তাকে এজন্য মোটা অংকের অর্থও দেন। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে একটি মামলা হয়। মামলায় এফবিআই এজেন্ট জোহান থ্যালারকে ৩০ মাস ও সিজারকে ৪২ মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা করেন গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর ফজলুর রহমান। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে দায়ের করা ওই মামলার কাগজপত্রের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অনুমতিপত্রও জমা দেন। পরে থানা পুলিশ সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। ওই মামলায় জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ দেশের বাইরে অবস্থানরত/বসবাসরত বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের কতিপয় ব্যক্তি ও উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়। এর কয়েকদিন আগে রমনা থানায় একই ঘটনায় একটি জিডি করে পুলিশ। ওই মামলাতেই শনিবার সকালে ইস্কাটনে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। পুলিশ ওই দিনই তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড নেয়।