রুহুল কবির রিজভী

নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির পরও নির্বাচন কমিশন লাভজনক চাকরির ঠাণ্ডাঘরের মায়ায় ভোটারবিহীন সরকারের নির্দেশে অনাচার ও জালিয়াতিকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন,‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন নির্বিকার। ইউপি নির্বাচন নিয়ে শাসক দলের ক্যাডারদের বিরতিহীন রক্তপায়ী হিংস্র তাণ্ডবে দেশের মানুষ অপমানিত ও অত্যাচারিত। তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ পদাধিকারীরা লাভজনক চাকরির ঠাণ্ডাঘরের মায়ায় ভোটারবিহীন সরকারের নির্দেশে অনাচার ও জালিয়াতিকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন।তিনি বলেন, দুই দফা নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, প্রাণহানি ও আহতের ঘটনার মধ্য দিয়ে নির্বিচারে ভোট জালিয়াতির সচিত্র সংবাদ দেশি-বিদেশি মানুষেরা অবলোকন করলেও ইসি প্রতিনিয়ত শান্তির লোলিতবাণী প্রচার করে চলেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ অন্য কমিশনাররা শাশ্বত মিথ্যাবাদী হিসেবে আজ দেশের মানুষের কাছে আখ্যায়িত হয়েছেন।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গণবিরোধী অবৈধ সরকার ধাবমান বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে ছুটাছুটি করছে। যেকোনো মুহূর্তে তাদের ছিটকে পড়ার সময় চলে এসেছে। আর এই পতনে বিশ্বের সকল স্বৈরাচার চমকে উঠবে।বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেকোনো সরকারের অধীনে করবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে অনড়।

রিজভী বলেন, আমরা এর আগেও বলেছি, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ক্ষমতায় যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের অধীনেই করব। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। যে সরকারের কোনো দলীয় পরিচয় থাকবে না। এ ব্যাপারে এখনো আমরা দ্বিধাহীন, স্পষ্ট ও অকপট। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সংশয় নেই।এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এই সরকার বড় দুর্বিনীত, গণবিরোধী ও ভোটারবিহীন। সে কারণে গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানকে পায়ে দলিত করছে তারা। এ ঘটনা জনগণ, দেশবাসী ও বিশ্ববাসী দেখছে। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করছি। এই দাবি ন্যায়সঙ্গত। এই নির্বাচনে (ইউপি) অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের সে দাবি দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে আরো বেশি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়ার এটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

বিএনপির সিনিয়র এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা গণতন্ত্রবিরোধী নই। আমরা নির্বাচন ও জনগণের ম্যান্ডেটের পক্ষে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। এটিই হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক দর্শন। আর অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হচ্ছে, সেই নির্বাচনের যে কী বিভৎস চিত্র হতে পারে সেটি এই নির্বাচনের (ইউপি) মধ্য দিয়ে ফুটে উঠছে।’তিনি বলেন, দু’দফা নির্বাচনসহ এ পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৪৫ জন নিহত ও পাঁচ সহস্রাধিক লোক আহত হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও সরকারি দলের যৌথ নৃশংস তাণ্ডব নিয়ে বিরোধী দল ও গণমাধ্যম যতই চেঁচামেচি করুক না কেন, নির্বাচন কমিশনের উচ্চপদস্থ পদাধিকারীরা ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে নির্লজ্জের মতো বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।রিজভী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নে একজনকে গাছে বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। একইদিনে রূপগঞ্জের ভুলতায় বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্বাস উদ্দিন ভুইয়ার গণসংযোগে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে প্রার্থীসহ ১২জন আহত হয়েছে। অপরদিকে, বান্দরবানের রুমা উপজেলায় এক ইউপি মেম্বর মং নু মারমাকে অপহরণ করে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জে পুলিশের সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী কুতুব উদ্দিনের ওপর হামলা এবং বগুড়ার গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুরে বিএনপির নির্বাচনী সভা পণ্ড করে দেয়া হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতা প্রমুখ।