দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এবার ব্রি ধান-৫৮ এবং ব্রি ধান-৬৭ এর বাম্পার ফলন হয়েছে। সম্ভাবনাময় এ জাত দু’টির ফলন দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সাড়া পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। এতে কৃষকরাও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। লবণাক্ততা সহনশীল এ জাত দু’টি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর এক অনন্য আবিষ্কার বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। ব্রি’র ফলিত গবেষণা বিভাগ কর্তৃক ট্রান্সফর্মিং রাইস ব্রিডিং (টিআরবি) প্রকল্পের আওতায় ওই জাত দু’টির বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচীর (এসপিডিপি) উপর আয়োজিত বিভিন্ন কৃষক সমাবেশ, শস্য কর্তন ও মাঠ দিবসে কৃষি বিজ্ঞানীগণ এসব তথ্য জানান।
ব্রি’র উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, ব্রি কর্তৃক সম্প্রতি আবিষ্কৃত ব্রি ধান-৫৮ ও ব্রি ধান-৬৭ বোরো মৌসুমে অত্যন্ত সম্ভবনাময় জাত। বিশেষ করে লবণাক্ত অঞ্চল যেখানে অন্য জাতের ধান আবাদ করে তেমন ফলন পাওয়া যায় না সেখানে ব্রি ধান-৬৭ খুবই উপযোগী। ফলে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে এ জাতের আবাদ বৃদ্ধি করে এদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও টেকসই করে বিদেশে চাল রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এ জাত দুটোর ফলন বিশেষ করে ব্রি ধান-৫৮ এর ফলন জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান-২৮ এর চেয়ে বিঘা প্রতি গড়ে প্রায় ৪-৫ মন বেশী। এর জীবনকাল ব্রি ধান-২৮ এর চেয়ে মাত্র এক সপ্তাহ বেশী। এ জাতের বিশেষ গুন হচ্ছে ব্রি ধান-৫৮ এর গাছ শক্ত, তাই সহজে হেলে পড়ে না। ছড়ায় ধানের সংখ্যা বেশী এবং চিটার সংখ্যা কম। এবার শস্য কর্তনে ডুমুরিয়া ও খুলনায় ব্রি ধান-৫৮ এর গড় ফলন হয় ৮.৫ টন/হে. (২৮ মন/বিঘা); কয়রা, ডুমুরিয়া ও অভয়নগরে লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান-৬৭ এর ফলন পাওয়া যায় যথাক্রমে ৬.৯০, ৭.০০ ও ৭.২০ টন/হে. (২৩-২৪ মন/বিঘা)। এতে স্থানীয় কৃষকগণ ব্রি ধান-৫৮ ও ব্রি ধান-৬৭ এর বাম্পার ফলন দেখে তা আবাদে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
তিনি উৎপাদনকৃত সকল ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে কৃষকদের মাঝে বীজ বিনিময় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে এ জাতের আবাদ সম্প্রসারণ করতে পরামর্শ দেন।
মাঠ দিবস উপলক্ষে খুলনা ও যশোর অঞ্চলে আয়োজিত একাধিক কৃষক সমাবেশে কৃষক-কৃষাণী ও কৃষি বিজ্ঞানী ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে তারা ব্রি ধান-৫৮ ও ব্রি ধান-৬৭ এর বীজ উৎপাদন মাঠ পরিদর্শন করেন। প্রতিটি মাঠ দিবসে প্রায় ১৫০ জন কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক সমাবেশে ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ব্রি ধান-৫৮ ও ব্রি ধান-৬৭ ব্রি’র এক অসাধারণ আবিস্কার। আবাদি জমি কমে যাওয়া সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের কৃষি বান্ধব নীতির কারনে ১৯৭০-৭১ সালের তুলনায় দেশে ধান উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুনের বেশি। এ জাত দুটোর আবাদ সম্প্রসারণ করে ধানের উৎপাদন আরও কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব হবে।
কৃষিবিদ মো. আব্দুল লতিফ বলেন, এ জাত দুটো সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনকে আরও টেকসই করবে এবং দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ব্রি’র গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম আরও জোরদারকরনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সমাবেশগুলোতে উপস্থিত কৃষকদের মাঝে ব্রি ধান ৫৮ ও ব্রি ধান৬৭ এর বীজ বিতরণ করা হয়। হাতে বীজ পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠে। এসময় কৃষকরা এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করেন।