বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্র সরানোর চিন্তা সরকারের

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের প্রতিবাদ, সংঘর্ষ ও হতাহতের পর বিদ্যুৎকেন্দ্র সরানোর চিন্তা করছে সরকার। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উদ্যোক্তা চাইলে বাঁশখালী থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প সরাতে সরকার সহায়তা করবে।বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এ ইঙ্গিত দেন।বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্র“পের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিলে গুলির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবারের এ ঘটনায় চারজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এ বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে স্থানীয়দের প্রতিবাদ চলছিল।

বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনবহুল এ দেশে ব্যবস্থাপনা বেশ কঠিন। শহর বড় হচ্ছে। গ্রামের মানুষ শহরমুখী। জমির দাম বাড়ছে। এদিকে বিদ্যুতের সেবা বাড়াতে হলে জমির প্রয়োজন অথচ মানুষ জমি ছাড়বে না। এ বিষয়টি ব্যবস্থাপনার জন্য মাস্টার প্ল্যান থাকতে হবে। সামনের দিনগুলোতে পরিবেশ এবং বিদ্যুতের সমন্বয় হবে বড় চ্যলেঞ্জ।তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের সুবিধা বাড়াতে খরচ বাড়ছে, তাই দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে আরও তিন বছর লাগবে। বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ও বিতরণ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এ সময়ে লোডশেডিং থাকবেও বলে জানান তিনি।

রাজধানীতে নিরবছিন্ন ও ত্রুটিমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিতরণ লাইন মাটির নিচে নেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এ বছরই ধানমণ্ডি এলাকায় এটা করা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরসহ চট্টগ্রাম ও সিলেটে একইভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এসব সিদ্ধান্তের কথাও জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।পাইপলাইনে সরবরাহ কমে তিন বছরে গ্যাসের চাহিদার ৭০ শতাংশ সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে পূরণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাইপ লাইনে গ্যাস দেওয়া নিরুৎসাহিত করতে চাই, এলপিজি নিয়ে আসতে চাই। মনে হচ্ছে, এলপিজি যেভাবে এগুচ্ছে, তিন বছরে ৭০ ভাগ চাহিদা কভার করতে পারবে।আগামীতে সিএনজি পাম্পেও এলপিজি নিয়ে যেতে চাই। এটি পরিবেশবান্ধব ও কম খরচের।

বাসা বাড়িতে পাইপে গ্যাস দেওয়া বন্ধ করার পেছনে দুর্ঘটনার শঙ্কা তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, প্রচুর এক্সিডেন্ট হচ্ছে। ঢাকা শহরের অনেক পুরনো গ্যাসের পাইপ জালের মত ছড়িয়ে আছে। বড় ভূমিকম্প হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।চট্টগ্রামের বাশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওখান থেকে সরে এসেছি। সেখানকার প্রশাসন বিষয়টির তদন্ত করছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের পাওয়ার ডিভিশিন জনমত যাচাই করছে।

চীনা কোম্পানির সহায়তায় ১৩০০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬ হাজার কোটি টাকায় বাঁশাখালীর সাগরতীরে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে এস আলম গ্র“প।ওই ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় ৬০০ একর জমি নিয়ে এস আলম গ্র“প কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

ভিটে ও পেশা হারানোর শঙ্কা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় সোমবার গ্রামবাসী সমাবেশ করতে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ। তাতে গুলি চালায় পুলিশ, নিহত হয় চারজন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসছে কি না জানতে চাইলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি প্রাইভেট কোম্পানি নির্মাণ করছে। আমরা সেখান থেকে বিদ্যুৎ কিনছি। উনারা ওখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র না করতে চেয়ে আবেদন করলে সেটা চিন্তা ভাবনা করা হবে।