10কিশোরগঞ্জ সদরের লতিবাবাদ ইউনিয়নে ধানের শীষ বিহীন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক মো. সেলিম বড় ব্যবধানে তৃতীয় হয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম। অটোরিকশা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৬০ ভোট। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির একাংশের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক (আনারস) পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৯৮ ভোট। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. সেলিম পেয়েছেন ২ হাজার ৫২৯ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছাকাছি ১ হাজার ৯৯৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আহাদ খান (মোটরসাইকেল)। প্রতিদ্বন্দ্বী সাত প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ বাকি তিনজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তারা হলেন-  জাতীয় পার্টির মো. জামাল উদ্দিন ১৫২ ভোট এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম (চশমা) ৮৭৫ ভোট ও মো. কামাল উদ্দিন ৯০ ভোট। এদিকে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলামকে দুধ গোসল করিয়েছেন এলাকাবাসী। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাটাবাড়িয়া এলাকার ৪০/৫০ জন নারী নামাপাড়া এলাকার শহিদুলের বাড়িতে এসে তাকে দুধ দিয়ে গোসল করান। এ সময় কয়েকজন নারী জানান, শহিদুল ইসলামের প্রতি ভালোবাসার টান থেকে তারা এমনটি করেছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, লতিবাবাদ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রথমে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু জেল-মামলায় কাবু এই নেতার মনোনয়নপত্র বাতিলের আশঙ্কা থেকে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী পরিবর্তন করে মনোনয়ন দেয়া হয় বিএনপি নেতা বোরহান উদ্দিন ভূঁইয়াকে। বাছাইয়ে শহিদুল ইসলামের মনোনয়নপত্র টিকে গেলে বেকায়দায় পড়েন নেতাকর্মী-সমর্থকরা। একপর্যায়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপি প্রার্থী বোরহান উদ্দিন ভূঁইয়া। ফলে এখানকার নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক ছিটকে পড়ে। বিএনপির প্রার্থীশূন্য এই ইউনিয়নের নির্বাচনে দলের সমর্থন পান শহিদুল ইসলাম। শেষ পর্যন্ত সেই সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে মাত্র ৬২ ভোটের ব্যবধানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাককে পরাজিত করেন। এলাকাবাসী বলছেন, নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আহাদ খানের জোর তৎপরতার কারণেই এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক মো. সেলিমের ভরাডুবি হয়েছে। দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচন হলেও এখানে প্রতীক ভোটারদের টানতে পারেনি। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, দুটিতে বিএনপি প্রার্থী এবং দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। পরাজিত হওয়া চারটি ইউনিয়নের মধ্যে লতিবাবাদ, রশিদাবাদ ও মাইজখাপন এই তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন। তবে তাদের কারো জামানত বাজেয়াপ্ত হয়নি। নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, ১১টি ইউপির মোট ৫৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ বর্তমান চেয়ারম্যানসহ মোট ২৩ জন তাদের জামানত হারিয়েছেন। জামানত বাজেয়াপ্তদের মধ্যে দুইজন বিএনপি প্রার্থীও রয়েছেন। এ ছাড়া ২টি ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুটিতেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এবং ৪টি ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩টিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন।
জামানত হারানো চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- লতিবাবাদ ইউনিয়নে মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন (জাপা) এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ও মো. কামাল উদ্দিন। রশিদাবাদ ইউনিয়নে এ.কে.এম রেজাউল হক ইকবাল (জাপা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন। বিন্নাটি ইউনিয়নে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী এ.বি.এম মহিউদ্দিন আহাম্মদ বাদল ও মো. আক্তারুজ্জামান শিপন। বৌলাই ইউনিয়নে মো. হাদিউল ইসলাম (ইসলামী আন্দোলন) এবং স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন কাদের, সাইফুল ইসলাম বাবুল ও মো. নজরুল ইসলাম। চৌদ্দশত ইউনিয়নে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আ. করিম ও মো. জাহাঙ্গীর আলম। মহিনন্দ ইউনিয়নে হোসাইন আহমেদ শামীম (ইসলামী আন্দোলন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদা। কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নে চার স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, মুর্শিদ উদ্দিন ভূঁইয়া, মোস্তফা কামাল ও মো. শরীফুল ইসলাম। যশোদল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শামছুল হুদা ও মো. রোকন উদ্দিন (বিএনপি)। দানাপাটুলি ইউনিয়নে মো. আরিফুল হক (বিএনপি) এবং মারিয়া ইউনিয়নে মো. মুনতাজ (জাপা)।